অর্থ সংকটে নেই চামড়া কেনার তোড়জোড়

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-31 11:33:48

রাত পোহালেই ঈদ। শুরু হবে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা। প্রতিবারের মতো এবারো পশুর চামড়া কিনতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন রংপুরের ব্যবসায়ীরা। তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। গতবছরের লোকসান আর চামড়ার চাহিদা কম থাকার সঙ্গে সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে অর্থ সংকটও। এ কারণে গুটি কয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া বাকিদের চামড়া কেনার আগ্রহ নেই।

রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে রংপুর মহানগরীর চামড়া পট্টি হাজীপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের দিন কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পুরনো ঘর মেরামত, চামড়া ধোয়ার স্থান নির্ধারণসহ লবণ মজুদ করছেন। তবে প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া ব্যবসায়ীদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।

জানা গেছে, এক সময় চামড়া কেনাবেচায় সবসময় সরগরম থাকা এই চামড়া পট্টিতে এখন তেমন কেনাবেচা হয় না। ঈদের দিন ছাড়া বাকি সময় চামড়ার গুদামগুলোতে চলে ব্যাটারি চালিত অটোবাইক ও রিকশা বিক্রি। এ কারণে পুরনো চামড়া পট্টি এখন অটোপট্টিতে পরিণত হয়েছে। এখানকার বেশির ভাগ চামড়া ব্যবসায়ী এখন মৌসুমি ব্যবসায়ী।

চামড়া ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার জন্য ঢাকার ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটকে দুষছেন পুরনো ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট, প্রতিবছর লোকসান ও ঈদের চামড়ার মূল্য কম নির্ধারণ করার কারণেই বাধ্য হয়ে ব্যবসা বদল করেছেন।

শামছুল, ইব্রাহিম, শহিদুল নামে কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। চামড়া ব্যবসায়ীদের ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হয় না। ঈদের সময় অনেক টাকা লাগে। ধার দেনা করে চামড়া কিনতে হয়। কম দামে চামড়া কিনতে বড় বড় ব্যবসায়ী আগেই সিন্ডিকেট করে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

প্রায় চার দশক ধরে চামড়া ব্যবসা করছেন আব্দুল গাফফার। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘১০-১২ বছর ধরে ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা পড়ে আছে। তাদের অনেকেই এখন লাপাত্তা। আবার কারো কারো ব্যবসার অবস্থা খারাপ। স্থানীয় আড়তদারদের কাছেও টাকা পাব। আমার মতো অনেকেরই কয়েক বছরের টাকা পড়ে রয়েছে তাদের কাছে। এখন অর্থ সংকটে চামড়া কেনার তেমন চাহিদা নেই।’

চামড়া পট্টি হাজীপাড়া এলাকার বড় ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন ও মাহবুবুর রহমান। তারা প্রতি বছরই চামড়া কিনে মজুদ করে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। এই দুই ব্যবসায়ী জানান, এবার সরকার ও ট্যানারি মালিকরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম পাঁচ টাকা কমিয়ে ৪৫-৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ ২০১৭ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০-৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকা দর ছিল। এবার প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম সারাদেশে ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩-১৫ টাকা। সরকারের বেঁধে দেয়া এই মূল্যে চামড়া কেনা সম্ভব হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর