জমেছে পশুর হাট, হাসি গৃহস্থদের মুখে

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ময়মনসিংহ | 2023-08-30 04:39:34

বরাবরের মতো এবারো ময়মনসিংহ নগরীর সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট বসেছে সার্কিট হাউজ মাঠের আবুল মনসুর সড়কের পাশে। এখানে গরু বিকিকিনির মাজেজাই যেন আলাদা। সার্কিট হাউজে বেচাবিক্রি তুঙ্গে উঠে ঈদের দু’এক দিন আগে। তার আগে দরদাম যাচাই-বাছাই আর ব্যাপারীদের হাঁকডাকেই চলে।

হাটের শুরুতে যেসব গৃহস্থ সার্কিট হাউজ মাঠে গরু বিক্রি করার জন্য আসেন তাদের কপালে থাকে দু:শ্চিন্তার ভাঁজ। তবে ঈদের একদিন বাকি থাকতেই সেই গৃহস্থদের মুখেই হাসি ফুটেছে। কাঙ্ক্ষিত দামেই গরু ছাড়তে শুরু করেছেন গৃহস্থ কিংবা ব্যাপারীরা।

শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেল থেকে রাত অবধি হাটের জমজমাট চিত্র দেখা যায়।

জানা যায়, তিন থেকে চার বছর বছর আগে সার্কিট হাউজ মাঠেই বসতো জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট। পরে ময়মনসিংহ সদর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ নির্দেশ দেন মাঠ নষ্ট করে যেন কোরবানির হাট বসানো না হয়। এরপর থেকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন মাঠের পাশে আবুল মনসুর সড়কে গত কয়েক বছর যাবত এ হাটের আয়োজন করে আসছে। সড়কের পাশাপাশি হাটটি গিয়ে থেমেছে ব্রহ্মপুত্র কাচারীঘাট ঘেষা হিমু আড্ডা রেস্টুরেন্টের মাথায়।

সাধারণত ঈদের চারদিন আগে এ হাট বসলেও জমে উঠেছে শনিবার বিকেলের পর থেকে। আবুল মনসুর সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকবারের মত এবারো হাটে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশী। সাধারণত মোটাতাজা গরু ক্ষতিকারক ওষুধ দিয়ে স্বাস্থ্যবান করার ধারণা থেকেই ক্রেতাদের আগ্রহ ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর দিকে।

এমন প্রমাণ মিললো নেত্রকোনার মেদমি ইউনিয়ন থেকে আগত দুলাল মিয়ার ‘শান্তরাজা’ গরুটিকে ঘিরেই। হাটে আসা লোকজন এ গরুকে ঘিরে ভিড় করলেও দরদাম আর সেলফি তুলেই ফিরে যাচ্ছেন। মালিক দুলাল মিয়া তিন বছর গরুটি লালন পালন করেছেন। তিনি গরুটির দাম প্রত্যাশা করেছেন ১০ লাখ। তবে সাকুল্যে ৬ লাখ টাকা ডাক উঠেছে এ গরুর। ফলে শান্তরাজাকে নিয়ে অনেকটাই হতাশ দুলাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন শান্তরাজার পেছনে খাবার বাবদ হাজারখানেক টাকা খরচ হয়েছে। সেইসঙ্গে অনেক শ্রম-ঘাম দিয়ে নিজের সন্তানের মতো করেই এটিকে বড় করে তুলেছি। এখন লোকসান দিয়ে ছাড়তে পারিনা।’

‘কালো পাহাড়’ নামে আরেকটি ৫ লাখ টাকা মূল্যের গরু উঠেছে এ হাটে। কিন্তু এ গরুটিও কেনার ব্যাপারে যেন কারও কোন আগ্রহ নেই। বিক্রেতা আব্দুল্লাহ হিল বাকী জানান, সবাই কেবল গরুটি দেখতে আসছেন কিন্তু কেনার মত দাম কেউ বলছেন না।

বড় গরুর দিকে ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকলেও ধুম বেচাবিক্রি চলছে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু। জামালপুর থেকে আসা মিলন মিয়া মাঝারি আকারের বেশ কয়েকটি গরু নিয়ে এ হাটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কয়েকটি গরু বিক্রিও হয়ে গেছে। তবে বিক্রি তুঙ্গে উঠবে মূলত ঈদের আগের রাতে, সেজন্য অপেক্ষায় আছি।’

শহরের খাগডহর এলাকা থেকে কোরবানির পশু কিনতে এ হাটে এসেছেন মাহমুদ আল রাফি নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী। ঘুরে ঘুরে দরদাম করে পছন্দ মত গরু কিনতে পেরেছেন তিনি। গরুটি রোগাক্রান্ত কিনা সে ব্যাপারেও সতর্ক নজরদারি ছিল তার। তিনি বলেন, ‘এ হাটে ছোট-বড় সব ধরণের গরুই পাওয়া যায়। তবে সাধারণত মোটাতাজা গরু রোগাক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে মাঝারি আকারের গরু নিয়ে কোন টেনশন নেই।’

বিক্রেতারা বলছেন, এ হাটে দেশী গরুরই আধিক্য বেশী। কিছু বিদেশি গরু থাকলেও দেশী গরুর প্রতিই ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর মধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুগুলোই বিক্রি হচ্ছে বেশী। হাটে ৪৫ হাজারের নিচে কোন গরু নেই।

একাধিক বিক্রেতা জানান, অনেকেই শেষ মুহূর্তে বেচাকেনার অপেক্ষায় রয়েছেন। এখনো যারা গরু কিনেননি মূলত তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন শেষ সময়ে গরু নিতে। সেসময় দামটা ভাল পাওয়া যায়। ফলে শেষ দেখার অপেক্ষায় আছেন তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর