ডেঙ্গু ঠেকাতে নতুন উদ্যোগ মসিকের, মশা নিধনে মসকিউটো ফিশ

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ময়মনসিংহ | 2023-09-01 21:12:47

সব রকমের মশা নিধনে শুধুমাত্র ওষুধের ওপর ভরসা না করে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। নগরীর প্রায় ৪০০ কিমি ড্রেন এবং ছোট বড় খালগুলোতে ছাড়া হচ্ছে মশাখেকো ‘মসকিউটো ফিশ’।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে এ প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নগরীর বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে একটি ড্রেনে প্রায় ৭ হাজার মসকিউটো ফিশ অবমুক্ত করা হয়েছে।

সব ধরণের মশা নির্মূলে এ প্রজাতির মাছ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এবং বছরজুড়েই এ মাছ অবমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু।

সম্প্রাতিক সময়ে সারাদেশে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠার নাম ডেঙ্গু। আর এ ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির ওপর বাড়তি নজর দিচ্ছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। নেওয়া হয়েছে মাসব্যাপী ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। প্রতিটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে মশামুক্ত করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপদ পাঠদান নিশ্চিত করার জন্য মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র টিটু। এছাড়া নিজ নিজ ঘর-দুয়ারও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

এ আন্দোলনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পাশাপাশি মেয়রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাজ করছেন ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোও।

নগরজুড়ে পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার যানবাহনে ডেঙ্গুবহনকারী এডিস মশা চলে আসার আশঙ্কা করে আগেভাগেই এ বিষয়ে সতর্ক সিটি করপোরেশন। এজন্য এ রুটে চলাচলকারী এনা ও সৌখিন বাস সার্ভিসের চালক ও সুপারভাইজারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে অ্যারোসল।

সিটি করপোরেশন থেকে আহবান জানানো হয়েছে, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর আগেই যেন পুরো বাসে মশার ওষুধ স্প্রে করা হয়। আবার নগরীর মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর যেন আবার অ্যারোসল স্প্রে করে মশা নিধন করা হয়।

এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে ৪৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৬১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো কারো ময়মনসিংহে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, মসিকের হাতে মশার ওষুধ ছিটানোর ফগার মেশিন রয়েছে ১৫ টি। এসব ফগার মেশিন নিয়ে নগরীর ৩৩ টি ওয়ার্ডে মশা নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন পরিচ্ছন্নকর্মীরা। তবে মশার প্রজননস্থল হিসেবে নালা-নর্দমাগুলো চিহ্নিত করে সেখানেও বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সিটি করপোরেশন।

ইতিমধ্যে মেয়র টিটু বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিকেলে ৭ হাজার মশাখেকো মসকিউটোফিশ অবমুক্ত করেছেন। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি জানান, আগামী সপ্তাহ খানকের মধ্যেই নগরীর ৪০০ কি.মি ড্রেন ও ১০-১২ টি খালে আরো লক্ষাধিক এ জাতীয় মাছ ছাড়া হবে।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু এডিস মশার উৎপত্তিস্থল স্বচ্ছ পানি এজন্য বাকৃবির গবেষক দল এডিস মশার ডিম বা লার্ভা ধ্বংস করতে আরেক প্রজাতির বিশেষ মাছ নিয়ে আসছেন। তারা আমাদেরকে সেগুলো সরবরাহ করলে পর্যায়ক্রমে সেগুলোও ছাড়া হবে।’

‘মশাভুক মাছ’ নিয়ে গবেষণা করেছেন বাকৃবির ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ। তিনি ২০১৭ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কয়েকটি ড্রেনে মশা নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি মসকিউটো ফিশের দক্ষতা নিয়ে গবেষণা করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর আগে আমেরিকা থেকে দেশে অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে আসে মসকিউটো ফিশ। পরে এটি দেশের মুক্ত জলাশয় এবং ড্রেনে ছড়িয়ে পড়ে। যারা খাবার হিসেবে প্রচুর পরিমাণে মশার ডিম খায়। এ মাছ ড্রেন ও নর্দমার নোংরা পানিতে স্বাভাবিকভাবেই বেঁচে থাকতে পারে। যদি এই মাছ দেশের প্রতিটি শহরের নর্দমা ও ড্রেনে ছড়িয়ে দেয়া যায় তবে এগুলো সারাবছর ধরে মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর