প্রতারণার মামলায় পলাতক শিক্ষক, ঠিক সময়ে তুলছেন বেতন!

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 06:49:12

চাকরি দেয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্য, চেক জালিয়াতিসহ তিন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি রাজশাহীর তানোর উপজেলার লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজ উদ্দিন মন্ডল। চলতি বছরের শুরু দিক থেকে তিনি পলাতক। স্কুলে আসেন, ক্লাসও নেন না। তবে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ম্যানেজ করে কৌশলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেখিয়ে ঠিকই মাস গেলে তুলছেন বেতন।

গত ৫/৬ মাস ধরে ‘প্রতারক’ শিক্ষক পালিয়ে বেড়ালেও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানলাম। আমি অবগত ছিলাম না। দ্রুত খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আর স্কুলের অন্য সহকারী শিক্ষকরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রভাবশালী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় ভয়ে মুখ খুলছেন না। তবে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তানোরের তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ভাষ্য- ‘হেডমাস্টার সাহেব পারিবারিক অসুবিধায় আছেন, মাঝে-মধ্যে আসেন। তবে কয়েক মাস একটু বেশিই ছুটি কাটাচ্ছেন। দ্রুত সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে সমস্যা কেটে যাবে।’

মামলার এজহার ও স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ সালের মে মাসে স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বাগমারা উপজেলার ইনতাজ আলীর কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজ উদ্দিন মন্ডল। পরে তাকে ভুয়া নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্র দেন তিনি।

তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন নিয়োগ এবং যোগদানপত্র দু’টোই ভুয়া। পরে ইনতাজ আলীকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে ঘুরাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক সিরাজ। এর মাঝে তাকে  অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও ভুয়া চেক লিখে দিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষক সিরাজের টালবাহানায় বাধ্য হয়ে গত বছরের শেষ দিকে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। তাতেও কাজ না হওয়ায় রাজশাহীর আদালতে প্রতারণা ও চেক জালিয়াতি মামলা করেন।

স্কুলের দুই জন সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইনতাজ আলীর মামলাসহ একই ধরণের তিনটি প্রতারণার মামলায় আদালতের বিচারক প্রধান শিক্ষক সিরাজের মন্ডলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল কাশেমের স্ত্রীর বড় ভাই হওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলতে সহায়তা পাচ্ছেন তিনি।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সিরাজ উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। পরে এসএমএস পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর