চলছে মাদকের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধ

, জাতীয়

ড. মাহফুজ পারভেজ | 2023-08-26 14:26:00

জঙ্গি নির্মূলের পর মাদকচক্র ধ্বংস করাকে সরকারের টপ এজেন্ডা বলে জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। আইন-শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত সব কয়টি বাহিনী এখন মাদকের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে নেমেছে। সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে এ নির্দেশনা এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে একাধিকবার চরম হুশিয়ারি দেওয়ার পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও সর্বোচ্চ তৎপরতা গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে ও ক্রসফায়ারে মারা গেছে একাধিক মাদক সম্রাট। আটক হয়েছে অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ী। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে মাদক বিরোধী অভিযান। প্রতিদিনই আটক হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড মাদকচক্র ধ্বংসের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। একক বা যৌথভাবে সংস্থাগুলো অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে কাজ করছে। পরিচালিত হচ্ছে একাধিক অভিযানও।

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে জানান, ‘ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সীমান্তবর্তী এলাকা ও জেলা শহরগুলোতে বাড়ানো হয়েছে বিশেষ নজরদারি। মাদকের চোরাচালান, পাচার ও সরবরাহ থামাতে চলছে তল্লাশী। বিশেষ বিশেষ এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন রুটের যানবাহনে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’

বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ও মাদক দ্রব্য ব্যবহারের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় সংশ্লিষ্টরা মাদকের নেটওয়ার্ক ধ্বংসের দিকে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারছেন না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করছে, এমন একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছে, ‘তথ্য ও পরিসংখ্যানের অভাবে মাদক বিরোধী অভিযান সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারছেন না। মাদক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য, উপাত্ত সামনে না থাকায় মাদকের পুরো নেটওয়ার্ক ভাঙ্গাও সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে অভিযানের ফলে মাদকচক্র কিছু দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্তিমিত হলেও নিঃশেষ হচ্ছে না। মাদক সমস্যাকে পুরোপুরি নির্মূল করতে হলে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আইনগত ও প্রশাসনিক দিক থেকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

মাদক বিরোধী সংগঠনগুলো মনে করে, বিদ্যমান মাদক সংক্রান্ত আইনকে আরো যুগোপযোগী ও কঠোর করতে হবে এবং প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থাকেও আইনের প্রয়োগে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে পারিবারিক-সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মিডিয়া, পরিবার, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ভিত্তিক ব্যাপক তৎপরতা চালাতে হবে।

বাংলাদেশে মাদক সমস্যায় আক্রান্তদের সম্পর্কে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় যে, কমপক্ষে সত্তর লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যাদের সিংহভাগই মাদকসেবী। বাকীরা মাদকের ব্যবসা, সরবরাহ ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। মাদকসেবীদের অধিকাংশই আবার কিশোর ও যুবক বয়সের। এই শ্রেণীটি দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস, সংঘর্ষ, সহিংসতা, খুন, জখম ও রক্তপাতের মতো আইন-শৃঙ্খলাগত সমস্যা ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

মাদকদ্রব্যের ব্যবহারের ক্ষেত্রে আগে ফেনসিডিলের প্রাধান্যের কথা জানা গেলেও এখন ইয়াবাকেই শীর্ষ বলে ধরা হচ্ছে। সীমান্ত পথে লাখ লাখ পিস ইয়াবা স্রোতের মতো অবাধে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জেও ইয়াবা, ফেনিসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক দ্রব্য সুলভে পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু মাদক আটক হলেও দেশের শক্তিশালী মাদকচক্রের নেটওয়ার্ক থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এমন কি, কোথাও কোথাও মাদকচক্রের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সংশ্লিষ্টতার তথ্যও প্রকাশ পেয়েছে। এদের কারণে মাদকচক্র, নেটওয়ার্ক ও মাদকের আড্ডাখানা ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর