ডেঙ্গু প্রতিরোধে কতটা প্রস্তুত পর্যটন নগরী কক্সবাজার

ঢাকা, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কক্সবাজার | 2023-08-28 02:04:06

দিন যত যাচ্ছে ততই আগ্রাসী হচ্ছে ডেঙ্গু। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ২৫ জন। যাদের পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য খোলা হয়েছে বিশেষ সেল। যে সেল ডেঙ্গু রোগীদের সেবা পেতে সাহায্য করবে। ভর্তি থাকা ২৫ জন রোগী ছাড়াও একজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে, চট্টগ্রাম নেয়ার পথে উখিংনু রাখাইন নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এসব রোগীর মধ্যে ১৩ জন ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া উখিয়ায় ১ জন, রামুতে ২ জন, টেকনাফে ১ জনসহ বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপতালে ভর্তি হয়েছে।

এদিকে ডেঙ্গুর বিস্তার ঠেকাতে ফুলের টব, পরিবেশের চারপাশে জমে থাকা ময়লা আর্বজনা, যে সব স্থানে মশা জন্মায় সে সব জায়গা, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার এবং দিনে রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন চিকিৎসকরা।

স্থানীয়রা বলছে, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো ধীরগতিতে সরানো হয় ময়লার স্তুপ। সেখানে থেকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মশার উৎপাত। আর তাছাড়া ঈদের পরে ঢাকা থেকে যে সকল পর্যটক কক্সবাজার আসবে তাদেরকে বিশেষ করে পরীক্ষা করার তাগিদ দেন তারা। 

শহরের ৬নং এলাকার স্কুল শিক্ষক রবিউল ইসলাম রবি বলেন, দুইটি মোড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। যা রোদ উঠলেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। পৌর কাউন্সিলরকে একাধিকবার বলার পরও তার সমাধন হয়নি। এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক কাজ করছে। এখন হলেও তা পরিস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: মাহবুবুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, যে ২৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে তাদের বেশীরভাগই বাইরে থেকে আক্রান্ত হয়েছে। কক্সবাজারে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু সেলের প্রধান ডা: মো. শামসুদ্দীন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ক্রমান্বয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। সবচেয়ে আশংকাজনক এবং দুর্ভাগ্য যে-ডেঙ্গু রোগী শনাক্তকরণের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেই। ফলে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর কিভাবে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হবে তা জানাতে পারেননি তিনি।

সরজমিনে দেখা যায়, ডেঙ্গু শনাক্তকরণে কক্সবাজারবাসীকে ছুটতে হচ্ছে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে। ডেঙ্গু রোগীর হার ঊর্ধ্বমূখী, দিন দিন বাড়তে পারে। কক্সবাজারের মানুষ সতেতন না হলে বিপদ হতে পারে। কেননা পৌরসভার নালা নর্দমাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান জরুরি ভিত্তিতে আরও আগে পরিষ্কার করা উচিত ছিল বলে মনে করেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। ২৫ জনের অবস্থা ভালো তবে একজন রোগীর ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ায় একটু অবনতির দিকে রয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্তকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত আমরা বাইরে থেকে করিয়ে নিচ্ছি।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ইতিমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা নিধন চলছে। নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে। আশা করছি কক্সবাজারে ডেঙ্গুর তেমন বিস্তার ঘটবে না।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পর্যটন শহর হিসেবে যতটুকু সম্ভব প্রতিরোধের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সমুদ্র সৈকতের এগারটি পয়েন্টে এ অভিযান চলছে। ময়লা-আবর্জনার স্তুপ সরিয়ে নিতে পর্যটন সেলের দায়িত্বরতরা কাজ করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর