রাজশাহী মেডিকেল নামে সরকারি খরচ, অর্থ যাচ্ছে রোগীদের

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 20:04:04

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন ২০ জন রোগী। বর্তমানে চিকিৎসাধীন পুলিশ রয়েছেন ৩৩ জন। এর মধ্যে আতিক হাসান নামে একজন পুলিশ কনস্টেবলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস সোমবার দুপুরে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, ‘রোববার পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী ছিল ৪৫ জন। সোমবার নতুন করে ৮জন রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাদের ডেঙ্গু পরীক্ষা করে পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। ফলে তাদের ডেঙ্গু কর্নারে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর একজন রোগী আইসিইউতে আছেন। তার অবস্থা আগের চেয়ে এখন ভালো।’

এদিকে, হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকরা রোগীকে পরীক্ষার জন্য বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাচ্ছেন। চিকিৎসকদের পছন্দের ক্লিনিকে পরীক্ষা না করালে রোগীদের একাধিকবার পরীক্ষা করানোর নির্দেশও দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের রোগ সনাক্ত করার জন্য এনএসওয়ান পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই পরীক্ষার কিট-রিএজেন্টও ছিল না রামেক হাসপাতালে। রোববার (২৮ জুলাই) স্ট্রিপ কিনেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

তবে এর খরচ বহন করতে হবে রোগীদের। অথচ এই স্ট্রিপ হাসপাতাল থেকেই তাদের বিনামূল্যে পাওয়ার কথা ছিল। আর রামেকে রক্তের সিবিসিসহ নানা ধরনের পরীক্ষার প্রয়োজন হলেও সেসব করতে হচ্ছে বাইরের ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। চিকিৎসকরা এসব পরীক্ষার জন্য বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাচ্ছেন।

এদিকে, রামেক থেকে রোগীদের ফ্রি চিকিৎসার কথা থাকলেও অনেক ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক রোগীর স্বজনরা। এমনকি একই টেস্ট দু’বার করিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ভাটবার গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন তাইজুল ইসলাম। তার সঙ্গে এসেছেন তার স্ত্রী নাজমা ও মা খাদিজা। তাইজুলের স্ত্রী খাদিজা বলেন, ‘সব জায়গায় শুনছি খরচ সরকার দিচ্ছে। কিন্তু এখানে নাপা ওষুধ ছাড়া আর কিছু পাচ্ছি না আমরা। আসার পর আমাদেরকে বলা হয়-রামেক হাসপাতালের মেশিন নষ্ট। তাই বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হবে। ওষুধও প্রেসকিপশন করে দিচ্ছে, বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনছি আমরা।’

তাইজুলের মা নাজমা বেগম জানান, ‘আমরা চারবার টেস্ট করিয়েছি। দুইবার নিজেদের পরিচিত হাসপাতাল থেকে আনলে সেই রিপোর্ট ডাক্তাররা দেখেনি। পরে তাদের কথা মতো পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আবার করিয়ে আনলে সেটা দেখেছেন। দু’দিনে আমার সাড়ে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।’

নাজমা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, এতো টাকা কই পাবো? সব তো সরকারের দেওয়ার কথা। কিন্তু ডাক্তাররা বলছে- এখানে তেমন কিছুই নেই। নার্সরা এসে শুধু নাপা বড়ি দিয়ে যাচ্ছে।’

ডেঙ্গু রোগী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

একই অভিযোগ আবুল হাসেমের বাবা মতিউর রহমানেরও। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলছেন- এখানে (রামেকে) টেস্ট ভালো হয় না। বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনেন। আমরা বাইরে থেকেই সিবিসি করিয়ে এনেছি। সেখানে বেশি টাকা নিচ্ছে। কিন্তু কিছু করার তো নেই।’

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘প্রথম দিকে বাইরে থেকে সবকিছু করা হচ্ছিল, বিষয়টি সত্য। কারণ আমাদের হাতে উপকরণ ছিল না। তবে রোববার রাত থেকে আমরা নিজেরা পরীক্ষা করছি। এখন থেকে হাসপাতালেই পরীক্ষা হবে। এটা পরীক্ষা করতে রোগীদের ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা খরচ হতে পারে। তবে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে এমন কোনো নির্দেশনা নেই।’

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘রামেক হাসপাতালে এখন সব পরীক্ষা করাতে পারবেন ডেঙ্গু আক্রান্তরা। চিকিৎসায় যাতে কোনো খরচ না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর