স্মার্টফোন অর্ডার দিলে নোকিয়া ১০৩, গাউন দিলে জাকাতের কাপড়

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-13 17:09:07

ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে ই-কমার্স ব্যবসা। বিক্রি বাড়াতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে অনলাইন শপগুলো। আর এই সুযোগে সঙ্ঘবদ্ধ একদল প্রতারক ক্রেতাদের ঠকিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সম্প্রতি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা এমন প্রতারণার শিকারের পর নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতারণার ঘটনাটি গড়িয়েছে মামলা পর্যন্ত।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বরাবর আসা অভিযোগ আমলে নিয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার আশরাফুল্লাহ’র নেতৃত্বে কাজ শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট।

মামলা সূত্রে জানা যায়, হাবিবুর রহমান নামের ঐ উপ-সচিবের স্ত্রী গত ২৫ এপ্রিল ‘ফ্যাশন টাচ’ নামের একটি অনলাইন শপ থেকে দুটি গাউন অর্ডার করেন। পরবর্তীতে ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের গাউছিয়া সংযোগ সড়ক সংলগ্ন এস. এ পরিবহনের মাধ্যমে গাউন দুটি পাঠালে চার হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করা হয়। পরে বাসায় এসে প্যাকেট খুললে দুটি ১৫০ টাকা দামের জাকাতের শাড়ি পাওয়া যায়।

পরে ঐ অনলাইন শপের পেইজে থাকা নম্বরে ফোন করে বিষয়টি তাদের অবহিত করা হয়। এরপর তারা এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান দেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে তারা ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দেয়। পরে তাদের ক্যাশ মেমোতে উল্লেখিত মৌচাকের ১৫৪/২-এ নম্বর দোকানেরও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে চলতি মাসের ২২ তারিখে প্রতারণার অভিযোগ এনে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ ধরণের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ১৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি’র সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মূলহোতা ওমর আলী এবং তার সঙ্গী মো. সজিব শেখ, মো. সোহেল রানা, মো. সৌরভ মজুমদার, মো. অমিত হাসান, মো. ইসাহাকুল ইসলাম আশিক, মো. আব্দুল করিম, রিয়াজুল জাহান জিনিল, মো. রাকিবুল হাসান, মো. রাব্বি, মো. শরিফুল ইসলাম, শ্রী বলরাম মন্ডল ও মো. হাবিব।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯১টি মোবাইল, পাঁচটি ল্যাপটপ, একটি পিসি, একটি প্রিন্টার, নিম্ন মানের ৩০টি শাড়ি, ১০টি থ্রি পিচসহ বিভিন্ন নিম্ন মানের পণ্য এবং প্যাকেজিং মালামাল জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদে গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানায়, তারা ফেসবুকে মিম ফ্যাশন, নিউ ফ্যাশন বিডি, কেজেড ফ্যাশন, রোজ ফ্যাশন বিডি, বিক্রয় বাজার বিডি, ইন্ডিয়ান থ্রি পিস গ্যালারী, শাধমার্ট বিডি, এসএম ফ্যাশন, স্টাইল জোন, এমজেড ফ্যাশন, সানজু ফ্যাশন, শাড়িস হাউজ, বিশ্ব বাজার, ব্রান্ড শপসহ বিভিন্ন নামে পেজ খুলে গুগল হতে ছবি ডাউনলোডের পর এডিট করে প্রতারণা করে আসছেন।

তারা আরও জানায়, তাদের পেইজে স্যামসাং জে ৭, জে ৫ মডেলের মোবাইল ফোন দেওয়া থাকলেও ক্রেতাকে নোকিয়া ১০৩ মডেলের চীনা মোবাইল পাঠান। কখনো কখনো খালি বাক্স স্কচ টেপ পেচিয়ে পাঠিয়ে দেন। একটি পেজ দিয়ে বেশ কয়েকদিন প্রতারণা করে আবার নতুন পেজ খুলে নতুন উদ্যমে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল এই প্রতারক চক্র।

জানতে চাইলে সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগের ডিসি মীর মোদাচ্ছের হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘এরা সবাই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই চক্রটি অনলাইনে বিভিন্ন পেজ খুলে নানা কৌশলে প্রতারণা করে আসছিল। ইতোমধ্যে শতাধিক পেজ শনাক্ত করেছি।’

অন্যদিকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সভাপতি অভিনেত্রী শমী কায়সার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘অসাধুতা, শঠতাসহ নানাবিধ অনলাইন অপরাধ ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে। এসব অপরাধ ই-কমার্স প্রক্রিয়া আস্থাশীল হওয়ার পথের প্রধান অন্তরায়। এজন্য উপযুক্ত আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন প্রয়োজন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর