সাঈদীসহ ১০৪ জনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর আদালতে চার্জ গঠন

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 23:27:57

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন হত্যা মামলার শুনানি শেষে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ ১০৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজশাহী অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক এনায়েত কবীর সরকারের আদালতে এই অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রায় ৯ বছর এবং চার্জশিট দাখিলের প্রায় ৭ বছর পর বিচার কাজ শুরু করা হলো।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর শিরাজী শওকত সালেহীন। তিনি জানান, মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন ১০৭ জন। এর মধ্যে তিন জন মারা গেছেন। বাকি ১০৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মামলার ৬০ জন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। অন্যরা পলাতক রয়েছেন। মহামান্য আদালত বিচারকার্যের তারিখ পরবর্তীতে নির্ধারণ করবেন।’

রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলি আরও বলেন, ‘ফারুক নিহত হওয়ার দু’দিন আগে সাঈদী রাজশাহীতে এসেছিলেন। তিনি ছাত্রশিবিরের নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে ফারুককে হত্যার নির্দেশনা দেন। এজন্য সাঈদীর বিরুদ্ধে ৩০২ ও ১০৯ এবং বাকিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।’

আদালতে চার্জ শুনানির সময় অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলামের নেতৃত্বে আসামিপক্ষে ১০ জন আইনজীবী ও দেলোওয়ার হোসেন সাঈদীর দুই ছেলে উপস্থিত ছিলেন। সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আবু মো. সেলিম। তিনি বলেন, ‘ফারুক হত্যার ব্যাপারে সাঈদী রাজশাহীতে এসে গোপন বৈঠক করেছেন এগুলো মিথ্যা। সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’

শুনানি শেষে আদালত থেকে সাঈদীকে রাজশাহী কারগারে পাঠানো হয়। তবে রাজশাহী কারাগার থেকে ঢাকায় কবে পাঠানো হবে সেই বিষয়ে কিছুই জানা যায় নি। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রিজন করে সাঈদীকে রাজশাহী কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে নেওয়া হয়। ভ্যান থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে করে আদালতে তোলা হয়।

এদিকে, জামায়াত নেতা সাঈদীকে আদালতে আনা নিয়ে রাজশাহী কারাগার থেকে আদালত প্রাঙ্গণ পর্যন্ত রাস্তায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল থেকে আদালত চত্বরের কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। তল্লাশি ছাড়া কাউকে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

জানা যায়, ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষ হয়। রাতভর চলা সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলে ছাত্রলীগ কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেনকে হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। হত্যার পরে ভোরে তার লাশ টেনেহিঁচড়ে হলের পাশের ম্যানহোলে ফেলে দেওয়া হয়।

ঘটনার পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি রাবি ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু বাদী হয়ে রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় জামায়াতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ ১৫০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত অসংখ্য শিবির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের জুলাই মাসে ১০৭ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে তদন্ত কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর