৪৫ হাজার প্লেনের টিকিট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে!

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম ,ঢাকা | 2023-08-27 02:44:46

সর্ষের ভেতর ভুত-এর মতো কাণ্ড ঘটিয়েছে বিমান বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের পকেটে পুরেছে ৪৫ হাজার প্লেনের টিকিট। এই টিকিটের কোনটি শতভাগ কনসেশনে নেয়া আবার কোনটি ৯০ ভাগ কনসেশনে। গত ১০ বছরের এভাবে ৪৫ হাজার টিকিট নিজেদের পকেটে পুরেছেন বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব টিকিটের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও রয়েছে। যে কারণে বিমান প্রতি বছরই লোকসানের বিত্তের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উপস্থাপিত কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। রোববার (২১ জুলাই) সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত কার্য বিবরণী উপস্থাপন করা হয়।

উত্থাপিত কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বিমানের অর্থ পরিদপ্তর, উচ্চ পদস্থ থেকে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা সবাই এ সুবিধা নিয়েছেন। একই ভাবে প্রকিউরমেন্ট এন্ড লজিস্টিক সাপোর্ট পরিদপ্তরের পরিচালক মমিনুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ নামের পাশাপাশি স্ত্রী-পরিজনদের নামেও নিয়েছেন একাধিক টিকিট। তিনি এবং তার পরিবার মিলে একাই সুবিধা নিয়েছেন ১০ বছরে ৪৬ টিকিট। এর কোনটিতে শতভাগ কমিশন, কোনটিতে ৯০ ভাগ। একই ভাবে, প্রকিউরমেন্ট এবং লজিস্টিক শাখার উপ-ব্যবস্থাপকও কম যাননি। তিনি এবং তার পরিবারের নামে নিয়েছেন ১১ টি টিকিট।  আর ওই বিভাগের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মো সরোয়ার হোসেন নিয়েছেন ১৩ টি টিকিট। এসব টিকিটের কোনটি শতভাগ কমিশন সুবিধা নিয়েছেন।

সিনিয়র সাইন রাইটার মোহাম্মদ মহসীন নিয়েছেন ২২টি টিকিট। নিজ, স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে এ তালিকায়। সব টিকিট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার। সহব্যবস্থাপক প্রকিউরমেন্ট স্বপন কুমার দে তিনি অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে নিজে এবং পরিবার-পরিজনের নামে কমিশনে টিকিট নিয়েছেন ৬৮ টি। তার প্রতিটি টিকিট কমিশনের পরিমাণ শতভাগ।

সহব্যবস্থাপক মোঃ নুরুজ্জামান ১২ টি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোকসানা আক্তার ১৮ টি, প্রশাসনিক সহকারী দিলরুবা আফরোজা  নিজ, স্বামী, ছেলে-মেয়ে এবং পিতা-মাতার নামে নিয়েছেন ২৬ টি ওয়ানওয়ে টিকিট। আবুল হাসেম ১৭ টি, একেএম শাহফুজুর রহমান ১৪ টি, মানিকুর রহমান ২ টি, লামিয়া শারমিন একাই নিয়েছেন ৫০ টি। নিজাম উদ্দিন ৮ টি, ফকির আবদুল হালিম ৮ টি, আবদুল খালেক ১৪ টি, আলমগীর কবির ১৮ টি, আবু তালেব ১৭ টি, গোলাম রসুল ১ টি, ইষ্টার হালদার ২২ টি, সাইফ উদ্দিন ১৬ টি, আবদুর রশীফ ১৩ টি, ফরহাদুর রেজা ১৮ টি, মাছুদুল আলম খান ৬ টি, শরীফুল ইসলাম ১৩ টি, শরিফ হাসান ১৩ টি, হাবিবা মির্জা ২০ টি, নেছার আলী গাজী ৪৬ টি, জাহাঙ্গীর আলম তোকদার ২০ টি, রবিউল ইসলাম ২০ টি, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ৪ টি এবং মতিউর রহমান ৪ টি। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই প্রকিউরমেন্ট ও লজিস্টিক পরিদপ্তরের কর্মরত ছিলেন।

প্রশাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ নিয়েছেন একাই ২৯ টি টিকিট, কেউ ২০ টি,  কেউ ১৮ টি। এর মধ্যে মো আল মাসুদ খান ও কামাল হোসেন ১৮ টি করে টিকিটি নিয়েছেন। ফখরুল আলম চৌধুরী নিয়েছেন ২৯ টি। যার প্রত্যেকটি টিকিটে কমিশন ধরা হয়েছে ৯৫ শতাংশ।  এ শাখার ৪২ জন কর্মকর্তার সবাই ৯০ থেকে ১০০ ভাগ কমিশন নিয়েছেন টিকিট প্রতি। আন্তর্জাতিক পরিভ্রমণে এ জেড এম আরিফ সহকারি ব্যবস্থাপক ও সংগঠন ও পদ্ধতি এ কর্মকর্তা ভারত সফরে ২০১২ ও ১৪ সালেই ২টি টিকিট নিয়েছেন। প্রতিটিতে ৯০ শতাংশ কমিশন নেন।  আইটি ডিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোস্তাক হোসেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রুটে নিজ পরিবারের নামে ৩৩ টি টিকিট নিয়েছেন। প্রতিটি টিকিটে কমিশন ৮৫-৯০ শতাংশ।

আর আরিফুল হাসান সাধন  (সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট) নিয়েছেন ৮৭ টি টিকিট। সব নিজ ছেলে-মেয়ে এবং পিতা-মাতাসহ আত্মীয় পরিজনের নামে। তিনিও ৯০ থেকে ১০০ ভাগ কমিশন নিয়েছেন প্রতিটি টিকেটের জন্য। তার পুরো পরিবার গত ১০ বছরে দেশের ভিতরে বিমানে ছাড়া অন্যকোনো যানবাহন ব্যবহার করেনি। নার্গিস আক্তার নিয়েছেন ৪৩টি টিকিট। সব টিকিটে পরিবার পরিজনের সুবিধা নিয়েছেন। এখানেও কমিশন পেয়েছেন ৮৫-থেকে ১০০ ভাগ।

এভাবে গত ১০ বছরে বিমানে কর্মকর্তা সব বিভাগ কমিশনে টিকিট গ্রহণ করেছেন। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। আগামীতে এসব কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করতে বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়য়ে সুপারিশ জানিয়েছে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, কি হয়েছে সেটা আমরা বলতে পারব না। আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাছাড়া কে কিভাবে নিয়েছে সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর