ট্রাম্পের কাছে করা অভিযোগের ব্যাখ্যা দিলেন প্রিয়া সাহা

বিবিধ, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 17:53:36

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে অভিযোগকারী নারী প্রিয়া সাহা বলেছেন, 'এ কথাগুলো আমি কেন বলি, এগুলো আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কথা। ২০০১ সালে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে নির্বাচনোত্তর ৯৪ দিন ধরে চরম নির্যাতন চলছিল, আজকের প্রধানমন্ত্রী তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য তিনি সারা পৃথিবীতে ঘুরেছেন, সমস্ত জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার অনুসরণ করে এসব বলেছি। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গায় বলা যায়, এটা আমি তার কাছে শিখেছি।'

রোববার (২১ জুলাই) ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিও কথোপকথনে এসব কথা বলেন তিনি। ৩৫ মিনিটের দীর্ঘ ভিডিওটিতে মোবাইলে আসা প্রশ্নে প্রিয়া সাহা তার যুক্তরাষ্ট্রে গমন, ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ, সাক্ষাৎকার পরবর্তী পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

কেমন আছেন জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা জবাব দেন, 'আমি ভালো নাই। আপনারা দেশে আছেন। প্রতিটা বিষয় আপনারা অবজার্ভ করছেন। প্রতিটা বিষয় কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সংবাদ মাধ্যমে কিংবা বিভিন্ন ব্যক্তি, সকল পর্যায় থেকে। সে বিষয়ে আপনারা খুব ওয়াকিবহাল।'

ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর হুমকি-ধমকি বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমার পরিবার ভীষণ সমস্যার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল আমার পরিবারের ছবি ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে পত্রিকায়। কথা বলেছি আমি। তারা আমার ছবি দিতে পারত। কিন্তু পরিবারের ছবি পত্রিকায় দিয়ে তাদের সবার জীবনকে বিপন্ন করে তোলা হয়েছে। তারা আমার কাজের সাথে কোনো অবস্থাতেই কেউ যুক্ত নয়।'

যুক্তরাষ্ট্রে কারা পাঠিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হিন্দু-বৌদ্ধ, খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ আমাকে পাঠায়নি। আমাকে আইআরএফ থেকে সরাসরি মেইল করা হয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে ফোন করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসছে এখানে।'

৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছেন বলে যে দাবি ট্রাম্পের কাছে করেছেন সেটা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের ২০০১ সালের যে পরিসংখ্যান বই রয়েছে তাতে যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে চ্যাপ্টার রয়েছেন। সেখানে এ বিষয়গুলো লেখা আছে। দেশভাগের সময় দেশের সংখ্যালঘু ছিল ২৯.০৭ ভাগ, এখন সেটা ৯.০৭ ভাগ। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৮০ মিলিয়ন। তাহলে যদি ওই শতাংশ জনসংখ্যা যদি একইভাবে বৃদ্ধি পেত তাহলে আমি যে ৩৭ মিলিয়নের কথা বলেছি সেটা মিলে যায়।'

ট্রাম্পের সঙ্গে কথোপকথনে প্রিয়া সাহা ‘ডিজিপিয়ার্ড’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। সেই শব্দের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, 'ডিজিপিয়ার্ড শব্দের মধ্যদিয়ে আমি যেটা বুঝাতে চেয়েছি, এই পরিমাণে লোক থাকার কথা ছিল যদি স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া, যেভাবে বাংলাদেশে জনগণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই একইভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যদি ২৯.০৭ শতাংশ থাকতো তাহলে এই জনসংখ্যাটা হত। কিন্তু তারা নেই। এই যে নাই, এটা যে ক্রমাগতভাবে ক্রমে গেছে সেটাই আমি বুঝাতে চেয়েছি।'

সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থেকেও সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি এই কথার সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি। হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ কোনো সাম্প্রদায়িক সংগঠন নয়। যেকোনো সাম্প্রদায়িক সংগঠনের তার নিজস্ব সম্প্রদায়ের জন্য এজেন্ডা থাকে। অনেক কিছু করে সেটা আপনি জানেন। হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ শুধু একটা কাজই করছে। সেটা হল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য কাজ করছে। যেটা বর্তমান সরকারও করছে। তাদের সুরক্ষা, তাদের নিরাপত্তা এই কাজটাই তারা করে। এবং অধিকার নিয়ে কাজ করে। একটা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কেমন করে সাম্প্রদায়িক সংগঠন হলো সেটা আমার বোধগম্য নয়।'

হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদে মুসলমানরা নেই কেন জানতে চাইলে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা বলেন, 'আপনি জানেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। সেই সালেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার পরেই দেশের অনেকে এই তিন সম্প্রদায়ই শুধু না, বাংলাদেশের অনেক মুসলিমও এদের সাথে থেকে ওইটার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য এই সংগঠনটার জন্ম হয়। যেহেতু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার বিরুদ্ধেই সংগঠনটা, সেকারণেই হয় মুসলিম সম্প্রদায় এই সংগঠনটার সদস্য হিসেবে নাই। কিন্তু আপনি জানেন দেশের প্রথিতযশা অসাম্প্রদায়িক লোক আমাদের উপদেষ্টা আছেন। আমাদের মিছিল মিটিংয়ে সর্বসময়ই বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক শক্তি, সিভিল সোসাইটি সবাই আমাদের সাথে আছেন। সকল রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আমাদের প্রোগ্রামে সহমর্মিতা পোষণ করেন।'

তিনি বলেন, 'দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান থাকবে তারা পরিসংখ্যান থেকে সত্যটা জানবেন। দেশের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার ইচ্ছে আমার কোনোকালেই ছিল না। কোনদিনও হবে না। দেশটা আমার। আমার পরিবারও যুদ্ধ করেছে দেশটা স্বাধীন করার জন্য। এই ভূমির জন্ম থেকে আমার পূর্বপুরুষেরা এখানে বসবাস করে। এই দেশের কোনো রকমের কোনো অমঙ্গল হোক, অকল্যাণ হোক সেটা কোনোকালেই আমার চাওয়া নয়। সেটা আমি করতে পারি না, করি নাই ,করব না।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর