উত্তরের নদ-নদীতে কমছে পানি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-24 20:05:18

তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, করতোয়াসহ অসংখ্য নদ-নদী বেষ্টিত উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।

তবে গাইবান্ধায় করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গতকাল শনিবার (২০ জুলাই) জেলার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জে নতুন করে বেশকিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে গত দুইদিন ধরে বন্যার পানির স্রোত কমে আসায় স্বস্তির হাসি ফিরেছে পানিবন্দী লাখো মানুষের চোখে মুখে। পানি নামতে শুরু হয়েছে শহরের বুক থেকেও। নদী বেষ্টিত চর, দ্বীপচর, নিম্নাঞ্চলে পানির স্রোত এখন অনেকটাই শান্ত হয়েছে।

ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হলেও কিছু জায়গায় এখনো রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের বন্যার্ত মানুষরা।

বর্তমানে ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকা বানভাসি মানুষদের মাঝে খাদ্যের জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। ঘটছে মানবিক বিপর্যয়। সাধারণ মানুষ একমাত্র সম্বল গবাদিপশুও রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে। গবাদিপশু রাখার জায়গা না থাকার পাশাপাশি গো-খাদ্য সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে।

বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলায় গত দুইদিনের তুলনায় ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদী পয়েন্টে পানির পরিমাণ অনেক কমেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, রোববার (২১ জুলাই) সকাল ৬টায় ধরলা সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে গতকাল যেখানে ৫৭ সেন্টিমিটার ছিল, আজ তা বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া চিলমারী পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হয়েছে ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

এদিকে এখনো উলিপুর-চিলমারী রেলপথে কিছুটা পানি থাকায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। তবে জেলা ও উপজেলা শহরে বাস-ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এ জেলার নয়টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে।

রোববার সকাল পর্যন্ত জেলা শহরে প্রবেশদ্বারে চারটি সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রেল লাইনের উপরে পানি থাকায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, সাদুল্লাপুর ও সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলায় নতুন করে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

অন্যদিকে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়ায় পানি কমতে শুরু হয়েছে। এবারের বন্যায় পাঁচটি উপজেলার সোয়া এক লাখ পরিবারের চার লাখ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ৭৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড গাইবান্ধার কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত কর্মকর্তা লালন আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, রোববার (২১ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি ৬০ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাইবান্ধা জেলার বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে নানা সহায়তা দেওয়াসহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। যা চলমান থাকবে।

লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে রোববার সকাল নয়টায় বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে এ পয়েন্টে সেতুর উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

লালমনিরহাট জেলার বন্যা কবলিত হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম, কালিগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলাতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে পানি কমে গেলে সংযোগ সেতু, কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

এছাড়া রংপুর ও নীলফামারী জেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পানি কমলেও এখনো দুর্ভোগ কমেনি। বিশেষ করে রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার নদী বেষ্টিত বেশ কিছু গ্রাম এখনো হাঁটু পানিতে তলিয়ে আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর