ওয়াসার ১১ খাতে দুর্নীতি, প্রতিরোধে ১২ সুপারিশ দুদকের

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 03:34:26

ওয়াসার ১১টি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে ১২টি প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) তাজুল ইসলাম কাছে প্রতিবেদন জমা দেন দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান। ওই প্রতিবেদনে এসব দুর্নীতি ও সুপারিশ করা হয়েছে।

এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো অবশ্যই দেখব। কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না, সেটি এই সরকারের অঙ্গীকার। সব জায়গায় দুর্নীতি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে আমরা সবাই অঙ্গীকারাবদ্ধ।

তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা দুদকের পাওয়া অভিযোগগুলো আমলে নিয়েছি। আমরা এগুলো তদন্ত করব। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেবে।

দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না করে বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়সীমা ও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়। এক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জড়িত থাকেন।

তিনি বলেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি এখনও পানযোগ্য নয়। ওয়াসার ১১টি দুর্নীতি আমরা পেয়েছি; এজন্য ১২টি সুপারিশ করেছি। বিভিন্ন প্রকল্পে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে, প্রকল্পের খরচ বেড়ে গেছে। কালক্ষেপণের কারণে এমন হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারদের তাদের কাজের চেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে। এতে কাজ তুলে নিতে পারছে না। তাই কাজের মান ও পরিমাণ বিবেচনা করে টাকা ছাড় করলে ভালো ফল পাওয়া যেতো। তাই বলা যায়, স্পষ্টতই এখানে ওয়াসার সংশ্লিষ্টতা আছে।

দুদক কর্মকর্তা বলেন, এসব বন্ধে টেকনিক্যাল লোকজনদের নিয়ে সারভেইলেন্স টিম গঠন করা যেতে পারে। প্রাক্কলন পর্যায়ে পেশাদারিত্ব বাড়াতে হবে। ওয়াসার অনেক কাজই অসমাপ্ত। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প ও পদ্মা-যশোদিয়া প্রকল্পেরও অগ্রগতি নেই। মনিটরিং না বাড়ালে এভাবেই পড়ে থাকবে এসব।

তিনি বলেন, প্রকল্পগুলোতে বিদেশি অর্থায়নও থাকে, সরকারি অর্থও থাকে; উভয় স্বার্থ যেন রক্ষা পায়। সরকারের স্বার্থ তথা জনগণের স্বার্থ রক্ষা পাচ্ছে কম। এজন্য নিরীক্ষা জোরদার করতে হবে।

ওয়াসার দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের ১২ সুপারিশ-

১. ঢাকা ওয়াসার চলমান প্রকল্প বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি অর্থ অপচয় রোধে বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থা কর্তৃক অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে যৌথ পরিমাণ টিম ও মনিটরিং টিম গঠন করা যেতে পারে। এসব টিম গঠন করা হলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারগণ প্রকল্পকাজ যথাসময়ে যথাযথভাবে সম্পাদনের বিষয়ে মনোযোগী হবেন এবং এতে সময়-অর্থ অপচয় ও দুর্নীতি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

২. প্রকল্পের প্রক্কালন তৈরির সময় কাজের যথার্থতা ও উপযোগিতা আছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে হবে।

৩. বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যাতে অহেতুক না বাড়ানো হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।

৪. দরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মিনিটরিং বাড়াতে মন্ত্রণালেয়ের শক্তিশালী টিম গঠন করতে হবে।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫. ঠিকাদারকে বিল পরিশোধের পূর্বে সুনিশ্চিত হতে হবে- শর্তানুযায়ী প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করেছে কি-না।

৬. ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মিটার রিডিংয়ের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৭. অবৈধ ওভারটাইম বিল রোধকল্পে ঢাকা ওয়াসার কর্মচারীদের জনবল কাঠামো সুনিদিষ্ট করে ও বিধিমালা প্রণয়ন করা।

৮. প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন, সওজ, বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা।

৯. ওয়াসার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে গনমাধ্যম দুদক, অডিট ডিপার্টমেন্টসজ নজরদারী বাড়াতে হবে।

১০. দুর্নীতি প্রতিরোধে সেবা গ্রহীতাদের নিয়ে ওয়াসার গনশুনানির আয়োজন কনতে হবে৷

১১. ওয়াসার মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নাধীন অবস্থায় বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ টিমের আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

১২. টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বুয়েটসহ অন্যান্য পেশাদার সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর