রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-11 09:29:35

বর্ষায় রোহিঙ্গাদের ত্রাণকার্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও দৃঢ় আর্থিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন। 

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা একত্রে এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই-কমিশন (ইউএনএইচসিআর), এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন থেকে শুরু করে গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ প্রতিকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে । গত আট দিনব্যাপী চলমান বৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শরণার্থীদের সাময়িক স্থানান্তর, আবাসন মেরামত এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে অবিরাম কাজ করে চলেছে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ।

৪ জুলাই থেকে ১২ জুলাই এর মধ্যে, কক্সবাজারে জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১০৪০ মিলিমিটার। এর মধ্যে, কুতুপালং শরণার্থী আবাসনের বিভিন্ন অংশে প্রায় ৭০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভূমিধস, বন্যা এবং দমকা বাতাসে শত-শত স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিনষ্ট হওয়ায় হাজার-হাজার শরণার্থী সাময়িক ভাবে বাস্তু-চ্যুত হয়েছেন। সর্বমোট প্রায় দশ লাখ শরণার্থীর মধ্যে ৫ শতাংশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি মোট জনসংখ্যার একটি ছোট অংশ মনে হলেও, ইতোমধ্যে সহায়-সম্বলহীন হয়ে যাওয়া শরণার্থীদের ওপর এর গুরুতর প্রভাব পড়েছে।

ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা; জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রদান; এবং ক্ষতিগ্রস্ত আবাসন, রাস্তা ও বাঁধ মেরামত ও পুনঃস্থাপনের জন্য এ সংস্থা তিনটির কর্মী, অংশীদার, এবং শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োজিত করেছে।

বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক নেতৃত্বে, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ এবং তাদের অংশীদারবৃন্দ বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নিতে সারা বছর জুড়ে শরণার্থীদের সাথে কাজ করে। এর মধ্যে আবাসন ও স্থাপনাসমূহকে আরও মজুতকরণ, জরুরি ত্রাণ মজুদ ও বিতরণের ব্যবস্থা এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসকরণের জন্য শরণার্থীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া এর মধ্যে অন্যতম।

সচেতনতা বৃদ্ধি, অগ্রিম ঝুঁকি শনাক্তকরণ, আবাসনে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিট ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচির মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমের ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস করতে এবং দুর্যোগ পরবর্তী কার্যে শরণার্থীরা নিজেরাও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছেন।

২০১৮ সালের সারা বছর এবং ২০১৯ সালের শুরুর দিকের প্রচেষ্টায় শরণার্থী আবাসনের পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে এবং সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোও দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত; তবে এটি এখনও একটি জরুরি পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচিত। যেখানে দুর্যোগপ্রবণ স্থানে বসবাসরত অসহায় পরিবারগুলোর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান সহায়তা প্রয়োজন এবং মানবিক সংস্থাগুলোর কাজ চালিয়ে যাওয়া অপরিহার্য।  

আইওএম-বাংলাদেশ এর ডেপুটি হেড অফ মিশন, ম্যানুয়েল মার্কেজ পেরেইরা বলেন, “চলমান ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে বলে মনে হলেও, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা ২০১৯ সালের বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছি এবং এ বছরের প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলায় নিয়োজিত সম্পদ ইতোমধ্যেই ২০১৮ সালের ব্যয়কে অতিক্রম করেছে। এ বছরের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পূরণ হয়েছে। ফলে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ত্রাণকার্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও দৃঢ় আর্থিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন”। 

ইউএনএইচসিআর এর হেড অব অপারেশন এন্ড সাব অফিস ইন কক্সবাজার, মারিন ডিন কাজদোমকাজ বলেন, “২০১৮ সালে জরুরি ত্রাণ ব্যবস্থাপনার ভিত্তি ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হবে প্রশিক্ষিত শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবকদের নিজস্ব দক্ষতা, আত্ম-নির্ভরশীলতা, সচেতনতা বৃদ্ধির সক্ষমতাকে কেন্দ্রে রেখে তাদেরকে প্রথম সংবেদনে নিয়োজিত হতে সহায়তা করা”। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের সংস্থা সমূহ, এবং অংশীদারবৃন্দের সমন্বিত সংবেদনে প্রমাণিত হয়েছে যে এই কমিউনিটি কেন্দ্রিক পদক্ষেপ, অবকাঠামোগত উন্নতি এবং বহুমুখী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিম একযোগে শরণার্থীদেরকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখার জন্য সময়োপযোগী সেবা প্রদান করছে”।

ডব্লিউএফপি বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি, রিচার্ড রেগান এ বছরের বর্ষা মৌসুমে যে প্রভাবের তার ইঙ্গিত করে বলেন “২০১৮ সালের পুরো জুলাই মাসের আমরা যেই খাদ্য-সহযোগিতা প্রদান করেছিলাম এই বছর এর মধ্যেই তার চেয়ে বেশি করেছি। উপর্যুপরি ভূমিধসের ফলে স্লোপ মেরামত কাজে প্রকৌশলীদের টিমও এ বছর তুলনামূলক বেশি ব্যস্ত। তবে শরণার্থীদের আবাসন স্থল নিরাপদ রাখতে প্রায় একই পরিমাণের কাজ চলমান রাখতে হবে। এর জন্য চলমান অর্থ ও মানব-সম্পদ প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে”।

এ সম্পর্কিত আরও খবর