শোকাতুর এরশাদের জন্মস্থান দিনহাটা

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম রংপুর | 2023-08-31 00:17:39

'রংপুরের মানুষের ভালোবাসা দেখে আমি অবাক। এখানকার মানুষরা আমার জেঠাকে (বড়আব্বা) এত ভালোবাসেন, তা রংপুরে না এলে বুঝতাম না। আমার জেঠা এদেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। মানুষ তাঁর অবদান ভুলতে পারবে না। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি তাঁর প্রতি রাষ্ট্রীয় অনাদর দেখে। তিনি তো সাবেক প্রেসিডেন্ট, বর্তমান সংসদের বিরোধী দলের নেতা। তারপরও জেঠার মৃত্যুতে এদেশে কোনো শোক ঘোষণা নেই।'

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্ন রেখেই কথাগুলো বলছিলেন এরশাদের ভাতিজা আহসান হাবিব লিটন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের জন্মস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থেকে রংপুরে এসেছেন আহসান হাবিব লিটন। তিনি এরশাদের চাচাতো ভাই মোছাব্বর হোসেনের ছেলে।

এরশাদের মহাপ্রয়াণে শোকে কাতর এই ভাতিজা রংপুরে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এসেছেন। জানাজাসহ দাফনকার্যে অংশ নিবেন তিনি।

রংপুরের পল্লীনিবাসে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এরশাদ নিয়ে  তার অনুভূতি জানান।

খুব সাদামাটা ভাষায় হাবিব বলেন, 'আমি ভারতীয় সীমান্ত পার হবার পর অবাক হয়েছি। বাংলাদেশে জেঠাকে (এরশাদকে) নিয়ে তেমন শোকাবহ চোখে পড়েনি। তবে রংপুরে আসার পর থেকে অনুমান করছি, এখানকার মানুষ জেঠাকে কত ভালোবাসে। তাঁর প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের যে ভালোবাসা তা বিস্ময়ের।'

তিনি আরো বলেন, 'আমি ভারতীয়। আপনাদের দেশ নিয়ে আমার কথা বলা ঠিক নয়। তবে এরশাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে আমিও রংপুরের মানুষের সঙ্গে একমত পোষণ করি। এরশাদ জেঠার মত বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী মানুষের কবর তো উন্মুক্ত হওয়ার কথা।'

পেশায় আইনজীবী হাবিব বলেন, 'আমার সাথে পেয়ারা (এরশাদের) জেঠার দেখা হয়েছিল ২০০৯ সালে। তিনি দিনহাটাতে এক সংবর্ধনায় গিয়েছিলেন। সেখানকার মানুষ তাকে খুব ভালোবাসে। তাকে আদর করে এখনো পেয়ারা নামে ডাকেন। আজ জেঠা বেঁচে নেই, তাঁর কথা ভেবে দিনহাটার মানুষ কাঁদছে।'

তার ভাষায়, দিনহাটার যে স্কুল থেকে এরশাদ ম্যাট্রিকুলেশন করেছেন, সেই দিনহাটা হাইস্কুলেও শোক চলছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা থেকে শুরু করে দিনহাটার সাধারণ মানুষজন ব্যথিত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের মৃত্যুতে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কারণে ছিটমহল বিনিময় সম্ভব হয়েছে দাবি করেন হাবিব। তিনি বলেন 'এরশাদ তো শুধু নেতা নন, একজন মানবিক মানুষ। তার মত মানুষ সত্যি বিরল। তার প্রচেষ্টার কারণে ভারত-বাংলাদেশের মধ্য ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। দিনহাটার পাঁচজন মানুষ এদেশের কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাদের মুক্তি ও ছিটমহল চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে জাতীয় সংসদে জেঠা কথা বলেছিলেন।'

এরশাদকে এদেশের মানুষ তার কর্মকাণ্ড, মানবিকতা, চেতনা ও উদারতার কারণে আজীবন মনে রাখবেন বলে জানান দিনহাটা থেকে আসা আহসান হাবিব লিটন।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার দিনহাটায় সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্ম। বাবা মকবুল হোসেন ও মা মজিদা খাতুনের চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে এরশাদ ছিলেন দ্বিতীয়। অবশ্য ভাইদের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। বাবা-মা আদর করে পেয়ারা নামে ডাকতেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর