ফেঁসে যাচ্ছেন এসপিসহ পুলিশের ৫০ সদস্য

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 17:09:22

পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগে তদবির ও বাণিজ্য ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল পুলিশ সদর দফতর। এ নিয়ে রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। সে অনুযায়ী ঘুষ লেনদেন বন্ধে ৬৪ জেলায় ৫ স্তরের নজরদারি শুরু হয়। এ প্রক্রিয়া চলমান ছিল পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায়।

এত কিছুর মধ্যেও ১২ জেলায় সক্রিয় ছিল প্রতারক ও ঘুষ চক্রের সদস্যরা। যারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নিয়োগপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে। পাশাপাশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার আগেই অনেকে ধরা পড়েছে কোন কোন জেলায়। তবে সবচেয়ে অপ্র্যতাশিত বিষয় হলো, এসব প্রতারক চক্রের সদস্যদের পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকার ঘটনায় টাঙ্গাইল, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, কুষ্টিয়া, রংপুর ও গাইবান্ধায় মামলা হয়েছে। এই ১২ জেলায় দায়ের করা ১৮ মামলায় ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে বগুড়া জেলায় সর্বাধিক পাঁচটি মামলা করা হয়। দুটি করে মামলা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনায়। অন্য জেলায় একটি করে মামলা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪১৭ ও ৪২০, ১৭০, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় এসব মামলা করা হয়।

গত ২১ জুন টাঙ্গাইলে কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলী এবং কথিত সাংবাদিকের স্ত্রী শাহানাতুল আরেফিন সুমিকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ। কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এটিই ছিল প্রথম গ্রেফতার। যা দিয়ে অনিয়মবিরোধী কঠোর বার্তা দিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ।

তারপরে নিয়োগে তদবির করতে গিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের কনস্টেবল আবদুল হাকিম সাময়িক বরখাস্ত হন। তার দুই দিন পরে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ ও রংপুর রেঞ্জে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর আগেই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার খবর পায় পুলিশ। সেই অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি ও তিনজন সিভিল স্টাফকে বরখাস্ত করা হয়।

তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের বড় ধাক্কাটা আসে যখন মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) সুব্রত কুমার হালদারের দেহরক্ষী কনস্টেবল নুরুজ্জামান সুমনকে ঘুষ নেওয়ার নগদ টাকাসহ আটক করে পুলিশ সদর দফতরের বিশেষ টিম।

এ সময় সংশ্লিষ্ট পুলিশ লাইন্সের মেস ম্যানেজার জাহিদ হোসেন, টিএসআই গোলাম রহমান ও পুলিশ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী পিয়াস বালার কাছ থেকেও ঘুষের ৭২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত টাকা লেনদেনের সঙ্গে মাদারীপুরের এসপি সুব্রত কুমার হালদারের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ সদর দফতরের বিশেষ টিম। এ ঘটনায় এসপির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পাশাপাশি রোববার (১৪ জুলাই) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মাদারীপুরের ওই এসপি সুব্রত কুমার হালদারকে বদলি করে পুলিশ সুপার উপ পুলিশ মহাপরিদর্শক রংপুর রেঞ্জের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া কুড়িগ্রাম জেলায় নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদককে খাগড়াছড়ি ও এসআই আবু তালেবকে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে আসবে আরো কঠোর শাস্তি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। আমরা আমাদের মত চেষ্টা করেছি। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল শুরু থেকেই।

তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে অনিয়ম খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা টিম জেলায় জেলায় কাজ করেছে। ন্যূনতম অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। পুলিশ সদর দফতর এই বিষয়ে কোন ছাড় দেবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর