এরশাদের দাফন রংপুরে চান ভিন্নদলের নেতারাও

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-31 05:45:59

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মরদেহ সামরিক কবরস্থানে সমাহিত করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ রংপুরের সর্বস্তরের জনগণ। দলমত নির্বিশেষে অনেকের দাবি, এরশাদের অসিয়ত অনুযায়ী রংপুরের পল্লী নিবাসই তার শায়িত হবার শেষ ঠিকানা। কারো কারো মতে রংপুরে সমাধি করা হলে রাজনীতিতে রাজধানী কেন্দ্রিক যে প্রচলন আছে, তাও বিকেন্দ্রীকরণ হবে।

রোববার (১৪ জুলাই) সকালে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলীয় এই নেতার মৃত্যুর পর পরই শুরু হয় সমাধিস্থল নিয়ে বিতর্ক। ঢাকায় থাকা দলের সিনিয়র নেতারা চার দফায় এরশাদের জানাজা করে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে ঢাকার সামরিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত জানান।

এদিকে এরশাদের মরদেহ দ্রুত এনে জানাজা ও দাফনকার্য তার অসিয়ত করা স্থানে করার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সহ কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকা রংপুর বিভাগের শীর্ষ নেতারা।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের দাবির প্রতি সমর্থন রয়েছে এখানকার দিনমজুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাকের পার্টিসহ অন্যান্য দলের নেতারাও চাইছেন সাবেক সেনা প্রধান এরশাদের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী রংপুর তার দাফন করা হোক।

এই বিষয়ে রংপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'এরশাদ একজন বর্ণিল রাজনীতিবিদ। তিনি অসিয়ত করে গেছেন, রংপুরের পল্লী নিবাসে যেন তার সমাধি হয়। আমরা বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীরাও চাই, এই সাবেক রাষ্ট্রপতিকে সমাহিত করা হোক। এখানে তার সমাধি করা হলে রাজনীতিতে রাজধানী কেন্দ্রিক যে প্রচলন আছে, তাও বিকেন্দ্রীকরণ হবে।'

অপর দিকে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, 'এরশাদ দেশ বিদেশে একজন আলোচিত রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের একজন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি যেহেতু অসিয়ত করে গেছেন তার সমাধি পল্লী নিবাসে করার জন্য। আমরাও চাই তার সমাধি রংপুরে হোক।'

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু তুষার কান্তি মন্ডল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'রংপুরের মানুষ হিসেবে এরশাদের মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। তিনি আমাদের এমপি ছিলেন। এদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রংপুরবাসী ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী পেতে পারে কিন্তু আর কোনোদিন রাষ্ট্রপতি পাবে না।'

এরশাদের পল্লী নিবাসে নির্মাণাধীন ভবন, ছবি: সংগৃহীত

 

জাকের পার্টির রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শিপন বলেন, 'এরশাদকে ঘিরে অনেক রাজনীতি হয়েছে। মৃত্যুর পর তারর দাফন নিয়ে মানুষ রাজনীতি দেখতে চায় না। তিনি যেহেতু পল্লী নিবাসে তার সমাধি করার কথা বলেছেন, এর জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান তৈরি করেছেন। এটা নিয়ে তো আপত্তি থাকার কথা নয়। রংপুরে এরশাদের সমাধি হলে সাধারণ জনগণ রাজনীতির আস্থা রাখবে। সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক না করে বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরি।'

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন গুরুত্বর অসুস্থ হলে রাজধানীর সিএমইচএ ভর্তি করা হয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। সেখানে টানা সতের দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে রোববার (১৪ জুলাই) সকাল পৌনে আটটায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষ।

এরশাদের পারিবারিক নিবাস রংপুর শহরের সেনপাড়ায় স্কাইভিউতে হলেও তিনি নিজে জমি ক্রয় করে রংপুর শহরের দর্শনায় মহাসড়কের পাশে দেড় একর পল্লী নিবাস নামে তার নিজস্ব আবাসন তৈরি করেন। রংপুরে সফরে আসলে তিনি সেখান থেকেই রাত্রিযাপনসহ সকল রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

গত বছরের অক্টোবরে পল্লী নিবাসের পুরনো স্থাপনা ভেঙে একটি আধুনিক বাড়ি নির্মাণও শুরু করেন তিনি। বাড়িটির নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। এই পল্লী নিবাসের পশ্চিম দিকে এরশাদ তার সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণে দলের স্থানীয় নেতাদের অসিয়ত করেছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর