এরশাদের অপ্রাপ্তি

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-24 11:43:48

মধ্যবিত্ত সাধারণ পরিবার থেকে ওঠে আসা এরশাদ, সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদেও দায়িত্ব পালন করে টানা ৯ বছর। কাগজে কলমে নব্বইয়ে পা রেখেছেন গত ২০ মার্চ।

সুশৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্থ এরশাদ আগে থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। জীবদ্দশায় সবকিছু গুছিয়ে রেখে যেতে চেয়েছিলেন। অনেকখানি গুছিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু তারপরও কিছু বিষয়ে অতৃপ্তির কথা জানিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘনিষ্ঠজনরা।

তারা বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, রংপুরে বাড়ি করলেন কিন্তু সেই বাড়িতে একদিনের জন্য থাকা হলো না। রংপুর শহরে অবস্থিত ব্যক্তিগত আবাস “পল্লী নিবাস” সংস্কার করে তিনতলা ভবন গড়ছেন। কাজও প্রায় শেষের দিকে। এতোদিন বাউন্ডারির মধ্যে আলাদা আলাদা ভবন ছিলো, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ থাকতেন দ্বিতল ভবনে।  অন্যান্য স্টাফদের ছিলো একতলা বিশিষ্ট ভবন।

সবগুলো ভেঙে তিনতলা কমপ্লেক্স নির্মাণাধীন। দ্বিতীয় তলায় এরশাদ ও ছেলে এরিকের কক্ষ রেডি করা হয়েছে। কয়েক দফায় পেছানোর পর ২৮ জুন রংপুর যাওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন।  এবার গেলে ওই বাসাতেই থাকার কথা ছিলো। সর্বশেষ ৩ মার্চ রংপুর গিয়েছিলেন তখন নির্মাণাধীন থাকায় হোটেলে উঠতে হয়েছিলো। কিন্তু তার নিজের গড়া নতুন বাড়িতে থাকার সাধ অধরাই থেকে গেলো।

আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন ‘আমার জীবনের অবশিষ্ট অধ্যায়’ নামের দ্বিতীয় জীবনী গ্রন্থ প্রকাশের। বিগত রমজান মাসে প্রিন্টিংয়ের জন্য সবকিছুই চুড়ান্ত করা হয়। ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন ঘটা করে বইটির প্রকাশনা উৎসব করার। নানা কারণে বইটির এখন প্রিন্ট করা সম্ভব হয় নি। এটাও তার আরেকটি অতৃপ্তি বলে জানা গেছে।

প্রথম জীবনী গ্রন্থ “আমার কর্ম আমার জীবন” প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালে। এতে স্থান পেয়েছে তার বেড়ে ওঠা, স্কুল জীবন, সেনাবাহিনীতে প্রবেশ, রাষ্ট্রপতি হওয়া, ক্ষমতা হস্তান্তরের পর জেলে যাওয়া এবং জেল থেকে মুক্তি পর‌্যন্ত। ৮৬৪ পৃষ্ঠার বইটিতে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন।

প্রথম বইয়ে নায়িকার নাম প্রকাশ না করলেও অকপটে স্বীকার করেছেন তার প্রথম প্রেমপত্রের অনুভূতি। সেই চিঠির ভেতরে থাকা গোলাপের পাপড়ির ঘ্রাণ। চিঠির সেই নায়িকা প্রতি আকর্ষণের কারণে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রেয়সীর সাড়া না মেলায় বেশিদূর এগুতে পারেন নি। অকপটে তুলে ধরেছেন তার সেসব অনুভূতির কথা।

আবার জীবনে প্রথম অন্যের টাই পরে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়া, চাকরিতে যোগদান, রওশনের বাবার সঙ্গে টেনিস খেলা থেকে কিভাবে পরিণয় সবই তুলেছেন তার প্রথম বইয়ে।

‘আমার জীবনের অবশিষ্ট অধ্যায়’ এতে স্থান পেয়েছে জেল থেকে বের হওয়ার পর তার রাজনীতি, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট। থাকছে নানা রকম ঘটনা প্রবাহ ও জাপার ভাঙ্গা গড়ার নানা রকম উত্থান পতন।

হুসেইন মহুম্মদ এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায় বইটির অনুলিখন করেছেন। এরশাদের দীর্ঘ সময়ের এ সহযোগী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, বইটির কাজ শেষ। তবে স্যারের জীবদ্দশায় বইটি প্রকাশ করতে না পারা কষ্টের হয়ে থাকলো।

কি কি স্থান পাচ্ছে বইটিতে, এমন প্রশ্নের জবাবে সুনীল শুভরায় বলেন, জেল থেকে মুক্তির পর ২০১৮ সালের নির্বাচন পর‌্যন্ত। অনেক অজানা সত্য জানতে পারবে পাঠক। তবে এরপরও কিছু সেন্সর থেকেই যায়। কারণ সব কথা বলা সম্ভব হয়না।

পৃষ্ঠা সংখ্যা আগের বইটির মতোই হতে পারে। আগের বইটিতে অনেক ছবি ব্যবহৃত হলেও এবার ছবি থাকছে না বলে জানান সুনীল শুভরায়।

অপর একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। কিভাবে জাতীয় পার্টিকে ভাঙা হয়েছে। তার দলের সদস্যের মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকার বিষয়। এরশাদ কি চেয়েছিলেন আর কি হয়েছে অনেকখানি খোলাসা করার চেষ্টা হয়েছে।

আরেকটি অতৃপ্তির কথা তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন ঘনিষ্ঠজনদের। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশর প্রশাসনিক কাঠামোগত পরিবর্তন। এরশাদ চেয়েছিলেন দেশকে আটটি প্রদেশে বিভক্ত করা হবে। উদ্দেশ্য ঢাকার উপর চাপ কমানো। উত্তরের ৮ জেলা নিয়ে রঙ্গপুর প্রদেশ। রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোকে নিয়ে গঠিত হবে বরেন্দ্র প্রদেশ।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ,ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর প্রদেশ। এ প্রদেশের রাজধানী থাকবে ময়মনসিংহ।

সিলেট বিভাগের ৪ জেলা নিয়ে হবে জালালাবাদ প্রদেশ। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে চট্টলা প্রদেশ। ময়নামতি প্রদেশে থাকবে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর,কুমিল্লা ও ব্রা‏ক্ষণবাড়িয়া জেলা।

জাহানাবাদ প্রদেশ গঠিত হবে গঠিত হবে খুলনা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট নিয়ে। বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ভোলা ও বরগুনা জেলা নিয়ে গঠিত হবে চন্দ্রদ্বীপ প্রদেশ।

বিগত কয়েকটি নির্বাচনে তার অন্যতম ইশতেহারে ছিলো প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু করা। কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠেনি। আর ছেলে এরিককে প্রতিষ্ঠিত করে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। যদিও তার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছেন। তারপরও কিছুটা প্রত্যাশা থেকে গেছে অধরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর