যেভাবে রাষ্ট্রপতি হন এরশাদ  

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-26 13:19:45

অভিনব কায়দায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কার্যত এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে নিজে ক্ষমতা দখল করেন। 

সেই দিনটি ছিলো ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। সামরিক শাসকের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত হন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহ্‌সান উদ্দীন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদে বসাতে সব কলকাঠি নেড়েছিলেন। নিজের বসানো আবুল ফজল মোহাম্মদ আহ্‌সান উদ্দীন চৌধুরীকে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি হন।

তার ক্ষমতাগ্রহণ নিয়ে দুই ধরণের বক্তব্য রয়েছে। বিএনপি দাবী করে বন্দুকের নলের মুখে রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। আর এরশাদ দাবী করতেন, প্রেসিডেন্ট আবদুস সাত্তারের অনুরোধক্রমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তাকে ডেকে ক্ষমতা দিয়েছিলেন।

সামরিক শাসক থাকা অবস্থায় ১৯৮৪ সালে নির্বাচন দেন। তখন রাজনৈতিক দলগুলো সেই নির্বাচন বর্জন করলে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচন। তখন নিজের ক্ষমতা পোক্ত করার জন্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন। ১৯৮৫ সালের ১৬ আগস্ট জনদল, ইউপিপি, গণতান্ত্রিক পার্টি, বিএনপি (শাহ) মুসলিম লীগ (সা) মিলে জাতীয় ফ্রন্ট গঠন করেন। জাতীয় ফ্রন্ট গঠনের ৪ মাস ১৪ দিনের মাথায় ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি ফ্রন্ট বিলুপ্ত করে জাতীয় পার্টি গঠন করেন।

সামরিক উর্দি থেকে বেরিয়ে আসতে অনেকটা একতরফা ও ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে ১৯৮৬ সালের ২৩ অক্টোবর ফের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন। গণতন্ত্রের লেবাস পরলেও বেশি গদি রক্ষা হয় নি। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

প্রায় ৯ বছর ক্ষমতাসীন থাকা কালে সকাল বিকেল মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে বেশ হাসির খোরাক জুগিয়েছিলেন। আবার ললনাদের আনাগোনাতেও হয়েছিলেন বেশ বিতর্কিত। তবে বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন সে সময়ে।

রাজধানী ঢাকাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিজয় সরণি, রোকেয়া সরণি, পান্থপথসহ ২২টি প্রধান সড়ক নির্মাণ, ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধের কাজ সমাপ্ত করা, সারাদেশে অসংখ্য বেইলী ব্রীজ স্থাপন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন।

প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করার ক্ষেত্রেও নিয়েছিলেন বেশ কিছু ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। দেশের ১৯ জেলাকে ভেঙে ৬৪ জেলায় রূপান্তর, একই দিনে ৪৬৪ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর ব্যবস্থা চালু ও হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ ঢাকার বাইরে নিয়েছিলেন। যদিও আন্দোলনের মুখে হাইকোর্টের বেঞ্চ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। উপজেলায় উপজেলায় কোর্ট স্থাপন করেছিলেন।

ওষুধ নীতি, ভূমি আইন সংস্কার, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সৈন্য প্রেরণ ছিলো যুগান্তকারি পরিবর্তন। যদিও তার বিদায়ের পর সাময়িক সময়ের জন্য উপজেলা পরিষদ বাতিল করা হয়। পরে আবার চালু করে আওয়ামী লীগ।

আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হলে, রাডার ক্রয়, জনতা টাওয়ার, মেজর মঞ্জুর হত্যা,বিটিভির যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়। পদত্যাগের পরপরেই আটক হয়ে কারাগারে চলে যায়। টানা ৬ বছর কারাগারে ছিলেন।

১৯৯০ সালে জেলে থেকেও রংপুরের ৫ টি আসনে জয়ী হন। এরপর প্রতিটি নির্বাচনেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে প্রথম ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালে অনেক নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে রংপুর থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের (মন্ত্রী মর‌্যাদায়) দায়িত্ব পালন করেন। চলতি সংসদে রংপুর -৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি টানা দু’টি সংসদে বিরোধীদলের আসন অলংকৃত করছে। যদিও অনেকে একে গৃহপালিত বিরোধীদল বলে উল্লেখ করে থাকেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর