রিকশার জন্য পৃথক লেনের সুপারিশ

ঢাকা, জাতীয়

আবু হায়াত মাহমুদ ,সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-26 09:55:40

রাজধানীর ব্যস্ততম কয়েকটি সড়কে রিকশা বন্ধের কারণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও রিকশা চালকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে নগরবাসীরও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নগরবাসীর মধ্যে অভিজাতরা রিকশা বন্ধের পক্ষে থাকলেও মধ্যবিত্তরা রিকশা ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

তবে এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে বিকল্প কয়েকটি সুপারিশের কথা বলেছেন সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই নগরবিদ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা বন্ধের পক্ষে মত ব্যক্ত করলেও তুলে ধরেছেন কয়েকটি বিকল্প উপায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ অধ্যাপক বলেন, নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে যানজট কমাতে রিকশা বন্ধে দুই সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত সঠিক। ঢাকার মত একটি মেগা সিটিতে সব সড়কে রিকশার মত ধীরগতির যানবাহন চলাচল করলে যানজট নিরসন সম্ভব নয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলতে না দেওয়ার অভিমত ব্যক্ত করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এ ক্ষেত্রে রিকশা ও বাইসাইকেলের জন্য আলাদা লেন করে দেওয়া যেতে পারে। যেমনটি রয়েছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এবং নিউমার্কেট থেকে সায়েন্সল্যাবরেটরি পর্যন্ত সড়কে।

তিরি আরো বলেন, সরকারি ছুটির দিনে বা বিশেষ দিবসগুলোতে সড়কে যানবাহন কম থাকে। তাই নগরবাসীর ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে বিশেষ দিবস ও ছুটির দিনগুলোতে এসব সড়কে রিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঢাকার মত একটি মেগা সিটির জন্য যথাযথ পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে আরো মনোযোগী হতে হবে।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। হঠাৎ করে মনে হলেই একটি সিদ্ধান্ত নিলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন নগরবিদ নজরুল ইসলাম।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/09/1562672449091.jpg

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক এ অধ্যাপক অভিযোগ করে বলেন, নগর উন্নয়নে রাজউকের পরিকল্পনা কোনটিই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। তাই নগরবাসীকে পড়তে হচ্ছে নানা দুর্ভোগের মধ্যে। রাজউকে মাস্টার প্ল্যান বা ঢাকা স্ট্রাকচারাল প্ল্যান বলে যা আছে সেখানে স্পষ্ট করে রিকশাসহ অন্যান্য ধীর গতির যানবাহনের ব্যাপারে নির্দেশনা আছে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে সিটি কর্পোরেশন হরহামেশা রিকশার লাইসেন্স দিচ্ছে।

বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোররেশনের (ডিএসসিসি) হিসেব মতে দুই সিটিতে রিকশার সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো। এর মধ্যে মাত্র ৮০ হাজারের অনুমোদন আছে, বাকি সব রিকশা অনুমোদনহীন, যোগ করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, রাজধানীর সড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজউক ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে রিকশা বন্ধের পরিকল্পনা করে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। রিকশা চালকদের দোষ দেওয়া যাবে না। ঢাকা শহরে এসব অনুমোদনহীন রিকশা কারা রাস্তায় ছাড়ছে তাদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া নিতে হবে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নজরুল ইসলাম বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি অনেকটা রাজউকের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটি এখন রাজউকের ওপর খবরদারি করে। শুধু যে রিকশা, তা নয়। অনুমোদনহীন আরো অনেক ফিটনেসবিহীন যানবাহন ব্যস্ততম সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যানযট বাড়িয়ে দিচ্ছে।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম

তিনি বলেন, রিকশা নিয়ন্ত্রণে প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের। নগরীর ব্যস্ততম সড়কে রিকশা বন্ধের ঘোষণা নতুন নয়, গাবতলী থেকে সায়েন্সল্যাবরেটরি পর্যন্ত অনেক আগেই রিকশা বন্ধ ছিল।

গত ১৯ জুন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে মহানগরীর অবৈধ ধীরগতির যানবাহন বন্ধ, ফুটপাথ দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত ৭ জুলাই থেকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে ডিএনসিসি’র প্রগতি সরণি ও মিরপুর রোডে রিকশা নিষিদ্ধ করা হয়। ডিএসসিসি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে।

ঘোষণা অনুযায়ী মিরপুর রোডের গাবতলী থেকে আজিমপুর, সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ ও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়। এর পর থেকেই এসব সড়কে রিকশা চালুর দাবিতে রাস্তা অবোরোধ করে আন্দোলন করছেন রিকশা চালকরা। আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে মাঠে নেমেছে কয়েকটি বামপন্থি দলও।

এ সম্পর্কিত আরও খবর