বিতর্কিত দুটি ধারা বাতিলের দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন

ঢাকা, জাতীয়

জাবি করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-31 00:33:37

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রশৃঙ্খলা অধ্যাদেশে নতুন যুক্ত করা বিতর্কিত দুটি ধারা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মরত অনলাইন, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা।

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা নতুন যুক্ত করা ধারাকে নিবারণমূলক আখ্যা দিয়ে বলেন, ছাত্রশৃঙ্খলা অধ্যাদেশে সংযোজিত ৫(ঞ) ও ৫(থ) ধারা যুক্ত করার মধ্যদিয়ে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।

এর ফলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাধার সম্মুখীন হবে। একই সাথে ৫(থ) ধারা অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষার্থীকে ফাঁসানো ও বিচারের সম্মুখীন করার সুযোগ রয়েছে।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা টাইমস-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাইয়ান বিন আমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি মহল নিজেদের দুর্বলতা ও দুর্নীতি ঢাকার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের মুখ চেপে ধরতে হীন চক্রান্ত করেছে।

জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি প্লাবন তারিক বলেন, ধারা দুটিতে কিছু টার্ম ব্যবহার করা হয়েছে যেটার ব্যাখ্যা কে করবে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। আমরা মনে করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে তাদের সুবিধামতো এই ধারা ব্যবহার করে যাকে তাকে হেনস্থা করতে পারে। তাই শীঘ্রই এ বিতর্কিত ধারা দুটির বাতিল দাবি করছি অন্যথা আমরা বৃহৎ কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মত প্রকাশ এবং তথ্য এ দুইয়ের প্রতি ক্ষমতাবানরা সবসময় ভীত কারণ যদি মত প্রকাশের পরিবেশ থাকে এবং তথ্য প্রকাশের সুযোগ থাকে তাহলে তাদের ক্ষমতা বা স্বৈরতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে। রাষ্ট্র যখন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে তখন তার প্রভাব প্রতিষ্ঠানের ওপরেও পড়ে।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ঐতিহ্য আছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে মত প্রকাশের জন্য বহুদিন ধরে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে গেছে আজকে সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একই রকম কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালান শিক্ষকরা। শিক্ষকরা পুলিশ হতে পারেন না, শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা আশা করি না। শিক্ষকরা ছাত্রদের অভিভাবক, যে সকল সাংবাদিক রয়েছেন তাদের অভিভাবক আর অভিভাবক হিসেবে তাদের যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে সে অধিকার দেওয়া শিক্ষকদের দায়িত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ধরনের দুর্নীতি হয় তা জানানোর জন্য প্রশাসনের উচিত সাংবাদিকদের উৎসাহ দেওয়া। তাই আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের স্বার্থে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষা করার শর্তে এই অধ্যাদেশ বাতিল করা হবে।

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশনের নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, গত ৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৫ অনুচ্ছেদে নতুন দুটি ধারা সংযুক্ত করা হয়। যেখানে অসত্য বা তথ্য বিকৃত করে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনো সংবাদ বা প্রতিবেদন স্থানীয়/ জাতীয়/ আন্তর্জাতিক প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক সংবাদমাধ্যমে/ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ/ প্রচার করা বা উক্ত কাজে সহযোগিতা করা এবং কোনো ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর উদ্দেশ্যে টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো অশ্লীল বার্তা বা অসৌজন্যমূলক বার্তা প্রেরণ অথবা উত্যক্ত করতে পারবেন না বলে জানানো হয়।

অধ্যাদেশ মতে, ধারা দুটির ব্যত্যয় ঘটলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখে ‘অসদাচরণ’ বলে গণ্য হবে এবং এজন্য লঘু শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, সতর্কীকরণ এবং গুরু শাস্তি হিসেবে আজীবন বহিষ্কার, বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার, সাময়িক বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে যেকোনো পরিমাণ জরিমানার বিধান রাখা হয়। ধারা দুটি সংযুক্ত করার পরেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মরত সাংবাদিক ও ছাত্র নেতাদের মধ্যে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর