নরসুন্দর শেফালী রানীর জন্যে সুন্দর হচ্ছে ঝালকাঠির কাঠালিয়া

ঢাকা, জাতীয়

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট , বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 15:02:04

ঝালকাঠি থেকে: ঝালকাঠির প্রত্যন্ত এলাকা দোগনা বাজারের নারী নরসুন্দর শেফালী রানী শীলের আজ স্বপ্ন পূরণের দিন। সেই সঙ্গে সুবর্ণ দিন কাঁঠালিয়ার। কারণ মন্ত্রীর সফর ঘিরে উন্নয়ন আর সম্ভাবনার নতুন সূর্য উঁকি দিচ্ছে এই জনপদের আকাশে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান এসেছেন তার আঙিনায়। এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফ থেকে উপহার নিয়ে। প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় ৪ শতাংশ জমির ওপর দুর্যোগ সহনীয়, টেকসই ও উন্নতমানের ঘর পাচ্ছেন শেফালী। সেই সঙ্গে কাঁঠালিয়া পেল প্রতিমন্ত্রীর তরফে নানা উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি।

জেলা প্রশাসনের বন্দোবস্ত করে দেওয়া ৪ শতাংশ জমির উপরে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু হবে শেফালির পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকার মত একটি বাড়ি। সেই জমির দলিল আর বাড়ির বরাদ্দ আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হলো শেফালীর হাতে।

শেফালীর বাড়িতে থাকবে সোলার সিস্টেম, বর্জ্য নিরোধক ব্যবস্থাপনা। তাকে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে না আশ্রয়কেন্দ্রে- দুর্যোগ সহনীয় এমন বাড়িই পাচ্ছেন শেফালী। প্রচলিত বাড়ির নকশার বাইরে বাড়তি বরাদ্দ দিয়ে নির্মিত হবে বাড়তি কক্ষও।

তাই স্বপ্ন পূরণের এই  উৎসবে শেফালী রানী শীলের বাড়িতে আজ যেন পূজার আনন্দ।

ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বলতলা গ্রামের দোগনা বাজার। অন্যান্য দিনের চাইতে মঙ্গলবার দিনটি ছিলো ভিন্ন। প্রতিমন্ত্রীর সফর ঘিরে জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপারসহ মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তাদের পদচারণায় গ্রামজুড়ে যেন ছিলো উৎসবের আমেজ। সবার দৃষ্টি ছিলো শেফালী রানী শীলকে ঘিরে।

সরকারি কর্মকর্তা আর গণমাধ্যমে কর্মীদের দৌড়ঝাঁপে অবশ্য বেশ ক'দিন ধরেই আলোচনায় গ্রামটি।

দোগনা বাজারের একমাত্র নারী নরসুন্দরের বাড়ির আঙিনায় মন্ত্রী আসছেন- এমন খবরে আগে থেকেই বেশ উৎসুক আর কৌতুহলী জনতা ভিড় করেন ওই এলাকায়। যে কারণে দ্রুত সরব হয়ে ওঠে গোটা জনপদ। সে ঝাঁকুনি ও পৌঁছে যায় জেলা শহর ঝালকাঠিতে।

মঙ্গলবার সকালে দোগনা বাজারে পৌঁছে বৃষ্টিতে পিচ্ছিল ৪০০ মিটার পথ হেঁটে বলতলা গ্রামে শেফালীর বাড়ির আঙিনায় হাজির হন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমান। প্রতিমন্ত্রীকে বাড়ির আঙিনায় পেয়ে  আবেগে রুদ্ধ হন শেফালী। ধরা গলায় গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রীকে।

প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার এনামুর রহমান জানান, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সংগ্রামী এই নারীর জীবনধারণের অবলম্বন হিসেবে নরসুন্দর পেশা নিয়ে প্রচারিত প্রতিবেদন তাকে বেশ নাড়া দেয়। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন সাহসী এই নারীর পাশে দাঁড়ানোর।

শেফালীর স্বপ্ন ছিল তার একটি ঘর হবে। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমানের সঙ্গে যুক্ত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

যে কারণে বাড়তি বরাদ্দে ৫০০ বর্গফুটের আয়তনের চাইতেও ঘরে  অতিরিক্ত আরো একটি কক্ষ সংযোজন করা হবে।

টি আর এবং কাবিখার অর্থ দিয়ে সারা দেশে দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তবে শর্ত হলো এ প্রকল্পের সুবিধাভোগীর নিজ নামে ঘর করার মতো  ন্যূনতম জমি থাকতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, শেফালী রানী শীলের সেই জায়গাটুকুও ছিলো না। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই প্রয়োজনে শেফালী রানী শীলকে আমি নিজেই জায়গা কিনে দিয়ে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সেখানে ঘর নির্মাণ করে দেব।

আমার পরিকল্পনা শুনে এগিয়ে আসেন জেলা প্রশাসক। তারাই বর্তমানে যে স্থানটিতে শেফালী রানী শীল বসবাস করছেন সেখানেই ৪ শতাংশ জায়গা বন্দোবস্ত দিয়েছেন।

তার মত প্রান্তিক মানুষদের আধুনিক টেকসই এবং দুর্যোগ সহনীয় এই ঘর পাবার কৃতিত্বের পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা মানবতার জননী দেশরত্ন শেখ হাসিনার - যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রায় দুই যুগ ধরে এলাকার লোকজনের চুল কাটছেন শেফালী। অসুস্থতা থেকে পঙ্গু হবার পর নিরুদ্দেশ হয়ে যান স্বামী বিশ্বনাথ শীল। সেই থেকে সন্তানদের মুখে দু মুঠো খাবার তুলে দিতে জীবিকার টানে প্রথা ভেঙে স্বামীর পেশাই বেছে নেন তিনি।

নরসুন্দর পেশা অবলম্বন করেই পাঁচ সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন শেফালী। দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে ওঠা শেফালীর সন্তানরাও মেধাবী। বড় মেয়ে তপতী রানীর বিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়ে বিথিকা রানী পড়ে বিএ তৃতীয় বর্ষে। ছেলে পলাশ রায় পড়ে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে। চতুর্থ মেয়ে সাগরিকা রানী পড়ে দশম শ্রেণিতে। পঞ্চম মেয়ে তনু রানী পড়ে নবম শ্রেণিতে।

দলিল হস্তান্তর শেষে পরে দোগনা বাজারে সুধী সমাবেশে প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একগুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবী জানালে তাতে সায় দেন প্রতিমন্ত্রী।

শেফালী রানী শীলের ভাগ্যবদলের পাশাপাশি ওই জনপদে প্রতিমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রতিশ্রুতিতে এলাকার চিত্রও বদলে যাবে- এমনটাই জানালেন কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক মিলন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর