আষাঢ়েও নেই বৃষ্টি, বিপাকে রাজশাহীর আমন চাষিরা

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 15:53:14

আষাঢ়ের ১৭ দিন পার হলেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা মেলেনি দেশের উত্তরাঞ্চলে। উল্টো বাড়ছে তাপমাত্রা। দিনভর তাপ বিলাচ্ছে সূর্য। সন্ধ্যা নামলেই আকাশে ঝলমল করছে রাতের তারা। আবহাওয়া অধিদফতরও দিতে পারছে না বৃষ্টির আগাম সুখবর। ফলে বর্ষাকালের ভরা মৌসুম বৃষ্টিবিহীন পার হওয়ার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।

বর্ষা মৌসুমের অর্ধমাসেও বৃষ্টির দেখা না পেয়ে চরম দুশ্চিন্তায় এই অঞ্চলের আমন চাষিরা। মেঘ-বৃষ্টির আশায় আকাশ পানে চেয়ে দিন কাটছে কৃষকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল বছর আমন ধানের দাম কম থাকায় কৃষকদের ব্যাপক লোকসান গুণতে হয়। সেই লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ফের আমন চাষের জন্য মাঠে মাঠে বীজতলা তৈরি করেন রাজশাহীর কৃষকরা। বীজতলা পরিচর্যায় প্রায় এক মাস কেটেছে। সময় হয়েছে চারা রোপণের। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের চারা রোপণের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করতে পারছেন না কৃষকরা।

আগামী ১২/১৫ দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টি না হলে জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের উপযোগী করা সম্ভব হবে না বলে জানান কৃষকরা।

বীজতলা পরিচর্যা করছেন এক কৃষক, ছবি: বার্তা২৪

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমিতে। এজন্য বীজতলা করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে। বরেন্দ্র অঞ্চলের আওতাধীন নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। তিন জেলা বীজতলা তৈরি করা হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে।

গোদাগাড়ী উপজেলার চান্দলায় গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এক মাস আগে বাড়ির পাশে ১২ বিঘা জমিতে রোপণের টার্গেটে স্বর্ণা ধানের বীজতলা করেছিলাম। ধানের চারা রোপণের উপযোগী হয়ে গেছে। কিন্তু বৃষ্টি নেই, জমি চাষ করে চারা লাগানোর উপায়ও নেই। আমন মৌসুমে সেচ দিয়ে জমিতে চারা রোপণ করতে গেলে ভিটামাটি বেঁচতে হবে। দেখা যাক- ১৫/২০ দিনের মধ্যে বৃষ্টি হয় কিনা। যদি না হয় তবে আমন চাষ করব না।’

তানোরের পাঁচন্দর গ্রামের শরিফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গত বছর আমন চাষ করে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে নেই। ২২ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগাতে চেয়েছিলাম। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছি, ধানের চারা রোপণ করব নাকি করব না। কারণ রোপণ করেও যদি বৃষ্টি না হয়, তবে ধান শুকিয়ে যাবে।’

মোহনপুরের জাহানাবাদ গ্রামের ৭২ বছর বয়সী কৃষক আকেল উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আষাঢ় মাসের ১৬/১৭ দিন পার হয়েছে। মোটে দু’দিন হালকা বৃষ্টি হয়েছে। তাতে রাস্তাও ঠিকমতো ভিজেনি। সেখানে জমিতে ধান লাগানোর জন্য চাষ দেব কীভাবে? আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভারী বৃষ্টি না হলে চলতি মৌসুমে আমন ধান আর লাগানো যাবে না।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বীজতলায় চারা ভালো হয়েছে। তবে আষাঢ়েও বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা এখনো চারা রোপণ করতে পারছে না। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে বীজতলার চারার বয়স বেশি হয়ে যাবে। বেশি বয়সী চারা রোপণের পর জমিতে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি বেঁচেও যায় তবে ধানের ফলন কম হয়। ফলে নতুন করে বীজতলায় তৈরি করে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে আমন চাষ করতে হবে কৃষকদের। কিন্তু তা অনেক দেরি হয়ে যাবে। সেই চারার ধান কৃষকদের ঘরে তোলা কষ্টসাধ্য হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর