আড়াই মাসে নিখোঁজ ৬ : পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-12 21:06:18

গণমাধ্যমে গত আড়াই মাসে ছয় ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার খবর এসেছে। সর্বশেষ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বার হাসান সিজার নিখোঁজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার পরিচিতজনরা। সামাজিক সংযোগমাধ্যম ‘ফেসবুকে’ তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন তারা। তাদের মতে, এক্ষেত্রে পুলিশ ‘চরম ব্যর্থ’। ছয়জনের মধ্যে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম পূর্বপশ্চিবিডি ডট নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক উৎপল দাস গত ১০ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ। এর আগে ২২ থেকে ২৭ আগস্টের মধ্যে নিখোঁজ হন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, ব্যবসায়ী ও বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায় এবং কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নর্থ-সাউথের শিক্ষক সিজার এই তালিকায় যুক্ত হয়ে শিরোনাম হয়েছেন উদ্বেগজনক সংবাদের। মোবাশ্বার হাসান সিজারের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে বলা হয়েছে, ‘সিজার ওইদিন বাসা থেকে বেরিয়ে তার কর্মস্থল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। কাজ শেষে বিকেলে তিনি অফিস ছাড়েন। এরপর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।’ ফেসবুকে গতকাল বুধবার দিনভর এ নিয়ে আলোচনা হয়; আলোচনার মূলে ছিল এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিজারের দু’টি একাউন্ট। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মিডিয়াব্যক্তিত্ব আনিস আলমগীর লিখেছেন, ‘আশ্চর্য! মোবাশ্বার হাসান সাড়া দাও। পুলিশ ভাইয়েরা একটু খবর দেন। মোবাশ্বার সাংবাদিকতার সঙ্গে ছিল, সাংবাদিকতা পড়িয়েছে। ক’দিন আগে উৎপল নামের এক তরুণ সাংবাদিকও হাওয়া হয়ে গেছে। চরম ব্যর্থতা পুলিশের, এতোদিনেও তার হদিস না করতে পারা।’ লেখক ও মানবাধিকারকর্মী পিনাকি ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘একটা ক্লু দেই। সিজার ছিল পলিটিক্যাল ইসলাম ও টেররিজম নিয়ে একজন স্বীকৃত গবেষক। এমন একজন মেধাবী তরুণ শিক্ষাবিদ ও গবেষককে হারাতে চাই না। সিজারকে খুঁজে বের করুন।’ উন্নয়ন সংস্থা স্টেপস টোয়ার্ডস ডেভলপমেন্টের কমিউনিকেসন অফিসার মোশরেফা মিলির বক্তব্য, ‘সত্যি কি স্যার কে পাওয়া যাচ্ছে না! পরশুও তার স্ট্যাটাস পড়লাম। কী হচ্ছে এসব?’ বেসরকারি টিভি চ্যানেল চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মন্টি বলেছেন, ‘এটা কোন কথা হলো! একটা মানুষ হুট করে হাওয়া হয়ে যাবে! সিজারকে কাল বিকেল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে খুবই অশান্তি লাগছে। উৎপলেরও এখনো কোন খোঁজ নেই। এমন নেই হয়ে যাওয়া অস্বস্তিকর। রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু নয়। আমাদের ছোটভাই সিজার ফিরে আসবে, তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত খুঁজে করবে এটাই একমাত্র প্রত্যাশা। আশা করি আমার সাথে ফেসবুকে যুক্তথাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বন্ধু, সহকর্মী, ভাই-বোনরা বিষয়টি আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।’ দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম লিখেছেন, ‘সিজার নিরাপদে ফিরে আয় পরিবারের কাছে, বন্ধুদের মাঝে।’ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ইউল্যাবটিভি-র হেড অব নিউজ মোশারাফ হোসাইন লিখেছেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পাওয়া অসাধারণ সব শিক্ষকদের মাঝে মোবাশ্বার হাসান স্যার অন্যতম একজন। অসাধারণ একজন মেন্টর তিনি। ইউল্যাব থেকে চলে যাওয়ার পরেও, স্যারকে যখনি মেইল দিয়েছি প্রয়োজনে, স্যার সাড়া দিতেন। যেখানেই থাকুন হে প্রিয় শিক্ষক, নিরাপদে ফিরে আসুন।’ মোবাশ্বারের ছাত্র নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী রাফসান আনন্দ লিখেছেন, ‘আজকে সকালে স্যার আমাদের একটা পরীক্ষা নিবেন বলে জানিয়েছিলেন কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার পরে ম্যাসেজ আসে যে কোন এক কারণে ক্লাস হবে না। ক্লাস ক্যানসেল হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু রক্ত হিম হয়ে গেল স্যার নিখোঁজ শুনে। পুলিশ প্রশাসনের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্যার কে খুঁজে বের করা।’ রাফসান আরো লিখেছেন, ‘মোবাশ্বার হাসান স্যার, জানিনা এখন কোথায় আছেন, কী অবস্থায় আছেন। শুধু চাই যেন আল্লাহ্ আপনাকে আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।’ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের শিক্ষার্থী খন্দকার রাকিব লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান-ইতিহাস-সমাজতত্ত্বে খুব অল্প সংখ্যক ভালো মানের একাডেমিশিয়ান যারা আছেন তাদের অন্যতম মোবাশ্বার হাসান। গত পরশুদিন তার একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম ন্যাশনালিজম নিয়ে, রিভিউ নোটও নিলাম। আজ শুনি তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ংকর!!’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজি এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আর কতো?’ লেখক ও ব্লগার রিফাত হাসানও একই সুরে বলেছেন, ‘যাস্ট এনাদার ওয়ান।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর