বনলতার প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি তদন্তে আরডিএকে দুদকের চিঠি

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 22:23:32

বনলতা আবাসিক এলাকার প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি তদন্তে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র সরবরাহের জন্য আরডিএ চেয়ারম্যান বজলুর রহমানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে রাজশাহী দুদকের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বার্তা২৪.কম-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত সোমবার (২৪ জুন) রাজশাহী সমন্বিত দুদক অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এডি) ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. আল-আমিন এই চিঠি দিয়েছেন।

দুদক উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আরডিএের বনলতা বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩১টি প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তথ্য হাতে পাওয়ার পর অনুসন্ধানের মূলকাজ শুরু করা হবে।'

জানা যায়, বনলতার ৩১টি প্লট দুর্নীতির অভিযোগে বঞ্চিতরা দুদক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রাথমিক ধরন বিবেচনা ও যাচাই বাছাই শেষে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে দুদক অঞ্চল রাজশাহীর উপ-পরিচালককে অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়।

চলতি জুন মাসের প্রথম দিকে প্লট কেলেঙ্কারির অনুসন্ধানে দুদকের সহকারী পরিচালক মে. আল-আমিনকে নিযুক্ত হন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি ২৪ জুন আরডিএর চেয়ারম্যানকে তথ্য সরবরাহের জন্য চিঠি দেন।

দুদকের দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে বনলতা আবাসিক প্রকল্পের ১৯৩টি সরকারি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় ক্ষতিগ্রস্তসহ মোট ১৫টি ক্যাটাগরিতে। ওই সময় প্রতি কাঠার দাম ছিল ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত পরিপত্র অনুযায়ী, শতকরা ৫ ভাগ হিসাবে আরডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাগে পড়ে মোট ১০টি প্লট।

কিন্তু আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে মাত্র চারজন প্লটের জন্য আবেদন করেন। ফলে আরডিএ কোটার অবশিষ্ট ছয়টি প্লট রেজ্যুলেশান করে পরে অপেক্ষমাণ তালিকার অন্য কোটার আবেদনকারীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পরে ২০১৭ সালে একই প্রকল্পের অবশিষ্ট ৩১ প্লটের জন্য আবেদন নিয়ে একই হিসেবে প্লট ভাগ-বণ্টন করা হয়। তবে এবারে রহস্যজনক কারণে ক্যাটাগরির সংখ্যা কমিয়ে মোট নয়টি করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কোটা রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করলেও তাদের আবেদন করারই সুযোগ দেওয়া হয়নি।

বঞ্চিতদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ৩১ মে আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস ও এস্টেট অফিসার বদরুজ্জামান চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে নিজেদের মধ্যে প্লট ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। সরকারি কোটা অনুযায়ী শতকরা ৫ ভাগ হিসেবে ৩১ প্লটের মধ্যে আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভাগে পড়ে সর্বোচ্চ দুটি প্লট।

কিন্তু এই ৩১ প্লটের মধ্যে চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এস্টেট অফিসারসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন। বনলতার প্লটের বরাদ্দ তালিকা অনুযায়ী চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নেন সবচেয়ে বড় আয়তনের ৭ কাঠার একটি প্লট। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ৫ কাঠা ও এস্টেট অফিসার বদরুজ্জামান নেন ৬ কাঠার প্লট।

এছাড়া চেয়ারম্যানের পিয়ন ইউনুস আলী দুটি, অথরাইজড অফিসারের পিয়ন রেজাউল করিম দুটি, আরডিএর নিম্নমান সহকারী শামসুন্নাহার মুন্নী দুটি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক শরিফুল ইসলাম একটিসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন।

জানতে চাইলে আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করছে। এই বিষয়ে এখন মন্তব্য করা সম্ভব নয়।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর