সেবার নামে প্রতারণা মডেল ফার্মেসির

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 15:56:33

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ‘মডেল ফার্মেসি ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প’ এর কর্মসূচি বাস্তবায়নের ৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৩০ টি ফার্মেসিকে মডেল ফার্মেসি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার হলেও, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭২ টি। সেবার নতুন মাত্রা হিসেবে শুরু হওয়া, এই উদ্যোগ এখন ব্যবহার হচ্ছে প্রতারণার অস্ত্র হিসেবে।  

মডেল ফার্মেসির নাম ভাঙ্গিয়ে ক্রেতা টানলেও, মডেল ফার্মেসির সেবা দিচ্ছে না তারা। এসব কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছেও মডেল ফার্মেসিগুলোকে গুনতে হয়েছে মোটা অংকের জরিমানা।

সম্প্রতি র‍্যাব সদর দফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালত, গ্রীনরোডের বেস্ট ওয়ান ফার্মা নামের একটি মডেল ফার্মাকে নানা অনিয়মে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কি কি মানদণ্ডের ভিত্তিতে মডেল ফার্মেসির স্বীকৃতিপত্র দেওয়া হয়। আর যা মানতে ব্যর্থ হচ্ছে স্বীকৃতি পাওয়া এই মডেল ফার্মেসিগুলো।  

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মডেল ফার্মেসিকে কমপক্ষে ৩০০ বর্গফুট এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। ২৪ ঘণ্টা রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের উপস্থিতসহ সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা মেনে মডেল ফার্মেসি কাজ করবে। ফার্মাসিস্টদের কাজ হবে প্রেসক্রিপশনের নির্দেশ অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ বুঝিয়ে দেওয়া। 

মডেল ফার্মেসিতে ওষুধের গুণাগুণ নিশ্চিত থাকার মতো তাপমাত্রা, ছাদ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী ওষুধ রাখা এবং ওষুধ রাখার ফ্রিজ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা। সেই সঙ্গে প্রেসক্রিপশন সার্ভিস ডেস্ক, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট, নন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রোডাক্ট এবং মেডিকেল সাপ্লাই অ্যান্ড ডিভাইসের জন্য আলাদা কর্নার থাকবে।

এসব তো গেল অবকাঠামোগত দিক। অন্যদিকে ওষুধের গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডের কথা বলেছেন মডেল ফার্মেসির উদ্যোক্তা কমিটির একজন সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি এন্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. এ.বি.এম ফারুক।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, মডেল ফার্মেসি ওষুধ সংক্রান্ত কয়েকটি কাজ করবে না। ফার্মেসি কোনো নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করবে না, ভেজাল ওষুধ বিক্রি করবে না, নকল ওষুধ বিক্রি করবে না, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রাখবে না, আন রেজিস্টার্ড ওষুধ রাখবে না। এগুলোকে বলে সেফ ড্রাগ রুলস। যা অবশ্যই মানতে হবে। পাশাপাশি মূল্য তালিকার বাহিরে ওষুধের দাম রাখতে পারবে না।

এদিকে সরেজমিনে একাধিক মডেল ফার্মেসি ঘুরে দেখা যায়। অধিকাংশ মডেল ফার্মেসি তার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যে মানদণ্ড দেখিয়েছে, তা মানছে না।

গুলশান ২ এর ইসলাম ফার্মা ও আল মদিনা ফার্মেসিতে তাদের কোনো ফার্মাসিস্ট নাই। জানতে চাইলে তারা উল্টো অভিযোগ করেছেন, ফার্মাসিস্ট রোগীকে নিয়ে বেশি সময় দেবার কারণে, ওষুধ বিক্রি কমে গেছে।

পান্থপথের গ্রীনরোডের বেস্ট ওয়ান ফার্মা ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে। বনানীর প্রেসক্রিপশন এইডে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ মিলছে।

৪৫ বছর ধরে ওষুধ নিয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রফেসর বলেন, যদি এভাবেই মডেল ফার্মেসি চলতে থাকে। তাহলে ওষুধের দোকানের সঙ্গে তাদের কোনো পার্থক্য পাওয়া যাবে না। 

অন্যদিকে জানতে চাইলে র‍্যাব সদর দফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বার্তা২৪. কমকে বলেন, মডেল ফার্মেসিতে যদি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বা ভেজাল ওষুধ পাওয়া যায়। এটি বড় অপরাধ। কেননা সরকারের দেওয়া যে স্বীকৃতি, তার সঙ্গেও প্রতারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা মডেল ফার্মেসি গুলোকেও  অভিযানের আওতায় নিয়ে এসেছি।

একই বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বার্তা২৪. কমকে বলেন, অপরাধ করে কেউ পার পায়নি। মডেল ফার্মেসিও পাবে না। তাদের যে মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেই মানদণ্ড যদি তারা পূরণ না করতে পারে। তাহলে তাদের স্বীকৃতি তুলে নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন, 

যেভাবে নির্ধারিত হয় ওষুধের মেয়াদ

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে যা বলছেন ঢাবির ‍দুই শিক্ষক

এ সম্পর্কিত আরও খবর