মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে যা বলছেন ঢাবির ‍দুই শিক্ষক

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 13:42:56

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়মিত অভিযানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ফার্মেসি থেকে জব্দ করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। আর এসব ওষুধ বিক্রির দায়ে ফার্মেসি মালিকদেরও অর্থদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এতে নড়েচড়ে বসেছে ওষুধ প্রশাসন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি এবং ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক আ.ব.ম.ফারুক বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছেন, ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে। তবে এসব ওষুধ ধ্বংসের পক্ষে তারা।

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ড. মনিরুদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমরা গবেষণায় দেখেছি, ওষুধের মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক ওষুধের ক্ষেত্রে মেয়াদ কোনো অর্থই বহন করে না। সম্প্রতি আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু কিছু ওষুধের কার্যকারিতা মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ বছর পর্যন্ত থাকে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিটি ওষুধের রাসায়নিক ধর্ম ও কার্যকারিতা সমান নয়। প্রত্যেকটি ওষুধের সক্রিয়তা ও নিজস্ব ধর্ম আছে। প্রত্যেক ওষুধ কিভাবে কাজ করবে এবং ধ্বংস হবে সেটার প্রক্রিয়া আলাদা। যেসব ওষুধের কার্যকারিতা ১৫-৩০ বছর পর্যন্ত থাকে সেসব ওষুধের ক্ষেত্রে মেয়াদ গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে সংবেদনশীল কিছু ওষুধ আছে যেগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গ্রহণ করতে হয়। কারণ এসব ওষুধের কার্যকারিতা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যেহেতু দেশে আইন আছে, তাই এসব ওষুধ অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে।'

দেশে ওষুধ কোম্পানিগুলোর ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, 'অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, যদি কিছু ওষুধের কার্যকারিতা অনেক বছর পর্যন্ত থাকে তাহলে গায়ে মাত্র ৩-৪ বছর মেয়াদ লেখা থাকে কেন? হতে পারে, ওষুধের পরিপূর্ণ কার্যকারিতা লাভের নিশ্চয়তা দিতে অথবা ওষুধের কাটতি ও চাহিদা বাড়াতে এমনটা করা হতে পারে।'

ঢাবির একই বিভাগের আরেক অধ্যাপক আ.ব.ম. ফারুক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ অনেকটা বিষাক্ত। কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে যকৃত ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওষুধ বানানোর সময় অণু তৈরি করা হয় যেগুলো যকৃত ও কিডনির জন্য ক্ষতিকর নয়। যেহেতু কোনো কিছু চিরস্থায়ী নয়। তাই মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এসব অণু শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতি করে। তবে সব ওষুধ এক নয়। কিছু ওষুধের মেয়াদ শেষে কার্যকারিতা কমে গেলও শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করতে হবে। এসব ওষুধ যাতে কেউ না খায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ কিছু ওষুধের মেয়াদ শেষ হলে সেটা যে বিষে পরিণত হয় তা অনেকে জানেন না।'

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি 'বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস' উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। এরপর মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জব্দ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে প্রশাসন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর