দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল-মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 21:36:32

দেশের সব মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আগামী এক মাসের মধ্যে ধ্বংস করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বাজারে অভিযানে নেমেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। দিনভর অভিযানে প্রায় সবগুলো ফার্মেসিতেই পাওয়া গেছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। পাশাপাশি পাওয়া গেছে ভেজাল ওষুধও।

সম্প্রতি র‍্যাব সদরদফতরের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত, রাজধানীর গ্রীন রোডের ১৬টি ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করে ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করেন। অভিযান পরিচালনা করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘প্রত্যেকটি ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে। তাছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের সঙ্গে ভেজাল ওষুধও দেখা গেছে দোকান গুলোতে।’

সরেজমিনে র‍্যাবের অভিযানে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ রোগের ওষুধ গুলোতেই মেয়াদ নেই। তবুও দেদারসে সেই ওষুধগুলোই বিক্রি করছে দোকানগুলো। কোনো কোনো দোকানদার আরও এক ধাপ এগিয়ে, তারা ওই লেখা মুছে নিজের হাতে লেখা মেয়াদ বসিয়ে দিয়েছেন। এমন অনেক কিছুই উঠে এসেছে অভিযানগুলোতে।

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ছবি: বার্তা২৪

 

র‍্যাবের অভিযান থেকে জানা গেছে, এসব ওষুধ ক্যান্সার, হার্ট, কিডনি ও অপারেশনেও ব্যবহৃত হচ্ছে। র‍্যাব, পুলিশ ও ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের অভিযান সূত্রে জানা যায়, সব মিলিয়ে প্রায় ১৬১ ধরণের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের সন্ধান পেয়েছে মোবাইল কোর্টগুলো।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। এসব ওষুধ জীবন রক্ষার পরিবর্তে জীবন কেড়েও নিতে পারে।’

এদিকে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিষয়ে রাজধানীর গ্রীন রোডের বেস্ট ওয়ান ফার্মার ওষুধ বিক্রেতা মতিউর রহমান বার্তা২৪.কম বলেন, ‘আমাদের অনেক ওষুধ একসঙ্গে কিনতে হয়। নিয়ম আছে কোম্পানিগুলো নিদিষ্ট সময় পরপর ওষুধ ফেরত নিয়ে যাবে। কিন্তু সেটা তাদের করার কথা থাকলেও তারা সেটা করে না। যার ফলে আমরা ওষুধগুলো ফার্মেসিতেই রাখি। আমাদের কিছু করার থাকে না।’

ভেজাল ওষুধ সম্পর্কে সেফ ফার্মার মালিক খালেক মোরশেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অনেক সময় তুলনামূলক কম দামে ওষুধ পাওয়া যায়। সেগুলো আমরা ভেজাল ওষুধ হিসেবে কিনে থাকি না। কম দাম বলেই কিনে থাকি। তবে সেগুলো ভেজাল ওষুধ। তবে ইচ্ছে করে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির জন্য আমরা বিক্রি করি না।’

অন্যদিকে, সার্বিক বিষয়ে র‍্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় ওষুধের মেয়াদের তারিখ ছোট করে দেওয়া হয়। যেটা ঠিক না। আর কোম্পানিগুলো নিয়মিত মেয়াদহীন ওষুধ বাজার থেকে সরায় না।’

র‍্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যেন মাস শেষে ওষুধগুলো নিয়ে যায়। আর ওষুধের মেয়াদের তারিখ যেন বড় বড় করে লেখা হয়। তাহলে অনেকটা কাজে দিবে। আর ভেজাল ওষুধ বিক্রি হয়, শুধু দোকানদারদের অধিক মুনাফার আশায়।’

তবে আশার আলো এটা যে, ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর