ইন্টারনেটের ‘ধীরগতিতে’ ট্যাবের সুফল মেলেনি

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 11:27:14

ইন্টারনেটের ধীরগতিতে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও দ্রুত ফলাফল প্রকাশের জন্য কেনা ট্যাবের সুফল মেলেনি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ফলাফল সরবরাহে 'বিগড়ে' যাওয়া সেই ট্যাব পঞ্চম ধাপে ফের ব্যর্থ হয়েছে। দ্রুত ফলাফল দেওয়ার জন্য কেনা সেই ট্যাবের কারণেই উল্টো ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে ট্যাবের যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি নয় ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে ফল প্রকাশে  বিলম্ব হয়েছে  দাবি নির্বাচন কমিশনের।   

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভুল তথ্যের কারণে সেই ট্যাবের মাধ্যমে পাঠানো তথ্য বাতিল করে পুরনো পদ্ধতিতে ফল সংগ্রহ করা হয়। পরে পরীক্ষামূলকভাবে সর্বশেষ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনের সবগুলো কেন্দ্রে এই ট্যাব ব্যবহার করা হয়। সেই নির্বাচনে সফলতার কারণেই চতুর্থ ধাপে ব্যবহার না করলেও পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে পাঁচটি উপজেলার ভোটে ট্যাব ব্যবহার হয়। কিন্তু সেখানেও ট্যাবের কারণে ফলাফল প্রকাশে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৮ জুন) গাজীপুর সদর, নারায়ণগঞ্চ বন্দর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, নোয়াখালী সদর, রাজশাহীর পবায় ট্যাব ব্যবহার করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভোট কেন্দ্রের সার্বিক প্রতিবেদন এবং ফলাফল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। কিন্তু ভোটের ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে সেই ট্যাবের ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে নোয়াখালী সদরে রাত সাড়ে দশটা ও রাজশাহীর পবায় রাত ১১টায় প্রকাশিত হয়। এরমধ্যে নোয়াখালী সদরে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হয়। এছাড়াও বাকি তিন উপজেলায় ইভিএমে ভোট হয়েছে, সেখানেও ট্যাবের কারণে ফল প্রকাশে বিলম্ব হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইতোপূর্বে উপজেলা নির্বাচনেও ট্যাব ব্যবহার করে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয়েছিল। এরপর কমিশন পরের ধাপের ভোটে ট্যাব ব্যবহার করেনি। তখন ট্যাবে সফটওয়্যার ও ইন্টারনেট দুটি সমস্যাই ছিল। কিন্তু এখন সফটওয়্যারে সমস্যা না করলেও ইন্টারনেটের সমস্যা ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটাচ্ছে। এমনকি ইভিএমে ভোট হওয়া উপজেলাগুলোতে ট্যাবের কারণে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে।

ম্যাক্সিমাস টি২ ব্র্যান্ডের ট্যাবগুলোতে পাঁচ ধরনের সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো হলো- ক্রেডেনশিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার, পোলিং পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ইলেকশন শিডিউল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, রেজাল্ট কাউন্টিং অ্যান্ড ডিকলেরাশন সিস্টেম ও সিস্টেম ডকুমেন্টশন। আর পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য কেনা হয়েছে সার্ভারও।

গত ১৮ মার্চ কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছ থেকে ৪২ হাজার ২০০টি ট্যাব ও সফটওয়্যার গ্রহণের জন্য সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হককে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট ট্যাব রিসিভিং কমিটি গঠন করে কমিশন।

পঞ্চম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের আগে মো. রফিকুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেছিলেন, আমরা সফটওয়্যারগুলো আপডেট করেছি। এখন আর তেমন সমস্যা নেই। তবে আজ ট্যাবে ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে ইসি সচিব মো: আলমগীর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গণনা ৩০ মিনিটের মধ্যে হয়ে যায়। আর ট্যাবে ফলাফল দ্রুত দেয়া যায়। কিন্তু অনেক জায়গায় ইন্টারনেট সমস্যা করেছে। সমস্যাটা ট্যাবের নয়, ইন্টারনেটের। এজন্য আমরা ভাবছি, সামনে নির্বাচনের আগে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলে বিটিআরটিসিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চিঠি দিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ইন্টারনেট স্পিড ঠিক রাখার জন্য বলা হবে। তবে এবার সফটওয়্যারের কোন সমস্যা হয়নি।

জানা গেছে, প্রিজাইডিং অফিসারদের মাঝে বিতরণ করা ট্যাবে ছিল সেন্টার রেজাল্ট ডিসক্রিমিনেশন অ্যান্ড রিপুটিং (সিআরডিআর) অ্যাপ্লিকেশন। প্রত্যেক প্রিজাইডিং অফিসারকে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রিজাইডিং অফিসার দুই ঘণ্টা পর পর ভোটকেন্দ্রের প্রতিবেদন পাঠানোর কথা থাকলেও ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনার পর প্রাপ্ত ফলাফল ও বিবরণী ফরমে লিপিবদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে ট্যাবের অ্যাপ্লিকেশনে প্রাপ্ত ফল এন্ট্রি এবং প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরকৃত ফল বিবরণী ছবি তুলে ফলাফলের সঙ্গে সংযুক্ত করে পাঠাতে গিয়ে ইন্টারনেটের কম গতি বিপত্তি সৃষ্টি করে।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ট্যাব মূলত কেন্দ্রে ব্যবহার হয়। সারাদিনের নির্বাচনী আপডেট ট্যাবের মাধ্যমে দেয়া হবে। কোথাও সংঘাত,পরিস্থিতি, ভোটের চিত্র এবং সার্বিক ফল ট্যাবের মাধ্যমে তৈরি করতে পারবে। বর্তমানে যে যে ট্যাব কেনা হয়েছে, দামের তুলনায় সেটির মান খারাপ না। বগুড়া-৬ উপনির্বাচনের সবগুলো কেন্দ্রে ট্যাব ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি।

ইভিএমের কেন্দ্রের ফলাফল বিলম্ব হওয়ার বিষয়ে এনআইডি অনুবিভাগের অপারেশন প্ল্যানিং এন্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এবার ইভিএমে যতটি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে, সবগুলোই সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে। কিন্তু ট্যাবের সমস্যার কারণে আমরা যথাসময়ে আমাদের ফল দিতে পারিনি।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও দ্রুত ফলাফল প্রকাশের জন্য  নির্বাচন কমিশনকে ওই ৪২ হাজার ট্যাব সরবরাহ করছে কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড। দ্রুত ফল পাঠানোর জন্য এ ট্যাবগুলো কেনার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। দরপত্র অনুযায়ী, ট্যাবগুলোর গ্যারান্টি তিন বছর। কিন্তু সরবরাহের সাতদিনের মাথায় ব্যবহার করতে গেলে ট্যাবগুলোয় সমস্যা ধরা পড়ে।

গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের উপজেলা ভোটে রংপুর সদর, গোপালগঞ্জ সদর, মানিকগঞ্জ সদর ও মেহেরপুর সদর উপজেলার ভোটে ট্যাব ব্যবহার করা হয়। সেখানে ইলেকট্রনিংক ভোটিং মেশিনেও ভোট নেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই ভোটের ফল দ্রুত পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই ট্যাবের মাধ্যমে ফলাফল পাঠাতে গিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। পরে শেষপর্যন্ত ট্যাবের মাধ্যমে পাঠানো তথ্য বাতিল করে পুরনো পদ্ধতিতে ফল সংগ্রহ করা হয়। যে কারণে এই দু’টি উপজেলার ফল ঘোষণা করতে বিলম্ব হয়। এই ঘটনার পর ইসি ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ট্যাবের ব্যবহার বাতিল করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর