স্ট্যাম্প তৈরি করে ভাগ্য ফিরেছে ফরিদপুরের ওমর ফারুকের

ঢাকা, জাতীয়

রেজাউল করিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ফরিদপুর | 2023-08-25 22:09:18

ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে দমে রাখা যায় না তারই উদাহরণ ফরিদপুরের ওমর ফারুক। লেখাপড়া জানেন না, অসচ্ছল পরিবার সন্তান, অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবুও থেমে নেই উদ্যোক্তা হয়ে তিনি নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তো করেছেনই। পাশাপাশি আরও ৫জন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে ওমর ফারুকের মঞ্জিলা টন ঘরে। 

ফরিদপুরের কানাইপুরের একটি বাজারে ওমর ফারুক ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প তৈরি শুরু করে। তার তৈরি সেই স্ট্যাম্প এখন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে। আর এই ক্রীড়া সামগ্রী তৈরি করে নিজে হয়েছেন স্বাবলম্বী। শুধু নিজে নয়, তার প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করছেন তারাও এখন অর্থনৈতিকভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে সচ্ছল জীবন যাপন করছেন।

ফরিদপুরে সদর উপজেলার কানাইপুর বাজারে সিনেমা হল পট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, বিরামহীন ভাবে ঘুরছে যান্ত্রিক মোটরের চাকা। আর সেখানেই কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট খেলার অন্যতম উপাদান স্ট্যাম্প ও লোহার তৈরি সরঞ্জামের হাতুল। ৬ শ্রমিক জন, এর মধ্যে কেউ কাঠের মাপ ঠিকঠাক করে সাইজ করছেন, কেউ যান্ত্রিক চালিত মেশিনের সামনে নিয়ে রাখছেন, আবার কেউ ওই কাঠ দিয়ে তৈরি করছেন স্ট্যাম্প। এছাড়া কোদাল, বেলচা, কাঁচি, দা-সহ বিভিন্ন লোহার নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীও তৈরি করছেন তারা। 

কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় এই প্রতিষ্ঠানে মূল উদ্যোক্তা ওমর ফারুকের সঙ্গে।  

স্থানীয় এক দরিদ্র পরিবারের ছেলে ওমর ফারুক (৩৫)। কাজের সন্ধানে ১৯৯৪ সালে গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকাতে। সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রীড়া সামগ্রী তৈরির কাজ শিখে ২০০৭ সালে চলে আসেন এলাকায়।

পড়ালেখা না জানা এই যুবক নিজেই একটি মেশিন দিয়ে স্ট্যাম্প তৈরি শুরু করেন। নিজে নিজে দিন-রাত পরিশ্রম করে স্ট্যাম্প তৈরি করে ছুটে যেতেন জেলা ও জেলা বাইরের বিভিন্ন জায়গাতে। নিজের তৈরি ক্রীড়া সামগ্রীর মার্কেট ধরতে বিভিন্ন দোকানে দোকানে ধরনা দিতে হত তাকে।

এখন দিন বদলেছে ফারুকের। তাকে আর ছুটতে হয় না। নিজের কারখানাতেই বসে পাচ্ছেন অর্ডার । দিন রাত ৬ জন শ্রমিক মিলে কাজ করেও শেষ করতে পারছে না অর্ডারের কাজ। প্রতি মাসে ৩০ হাজার স্ট্যাম্পের অর্ডার পাচ্ছেন তিনি।

ওমর ফারুক জানালেন, দেশে এখন ক্রিকেটের অফ সিজন। তবে ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হওয়ায় কাজের চাপ বেড়েছে। জানালেন, প্রকারভেদে প্রতিটি স্ট্যাম্প বিক্রয় হয় ২৪ থেকে ২৮ টাকা দরে।

তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক ছিলো তার, কিন্তু দরিদ্রতা তাকে সেই পথে বেশি দূর যেতে দেয়নি। বাধ্য হয়েই কিশোর বয়সে বাবার সঙ্গে মাঠে গিয়ে অন্যের ক্ষেতে কাজ করত। তবে সেই কাজ বেশি দিন করতে পারেন নি । কাজের সন্ধানে ছুটতে হয়েছে রাজধানীতে।

কারখানার স্ট্যাম্প তৈরির কারিগর নাজির বলেন, ৩ বছর ধরে কাজ করছি। প্রথম দেড় বছর কাজ শিখতে হয়েছে। এখন সব কাজ করতে পারি। প্রতিদিন ২৫০টি স্ট্যাম্প তৈরি করতে পারি। প্রতি স্ট্যাম্পে মজুরি হিসেবে দুই টাকা করে পায়। এক-একটি স্ট্যাম্প তৈরি করতে ২/৩ মিনিট সময় লাগে।

আরেক কারিগর শফিকুল বলেন, আমারও কাজ শিখতে ২ বছর লেগেছে। আমি এখানে ৪ বছর কাজ করছি। এখন সব কাজ করতে পারি। অন্য কাজের থেকে ব্যতিক্রম এই কাজ, আর খেলার স্ট্যাম্প তৈরি করতে ভাল লাগে। এখান থেকে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে পরিবার নিয়ে ভাল আছি।

‘পড়া-লেখা না জানা যুবকও যে উদ্যোক্তা হতে পারে তার নজির কানাইপুরের ওমর ফারুক। ওমর ফারুককে নিয়ে কানাইপুরের স্কুল শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম জানান, ওমর ফারুক আমাদের যুব সমাজের উদাহরণ, কারণ সে দরিদ্রকে জয় করে নিজেকে ও প্রতিষ্ঠানে অন্যদের স্বাবলম্বী করেছে। তার তৈরি ক্রীড়া সামগ্রী দেশের বিভিন্ন জেলাতে যাচ্ছে।

তিনি সরকারের কাছে ওমর ফারুকের জন্য পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আবহান জানান। যাতে সে আরো দূর এগিয়ে যেতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর