অর্ধশত কর্মকর্তাকে গাড়ি সেবা দিতে সুদমুক্ত অর্থ বরাদ্দ চায় ইসি

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-22 14:29:34

উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অনুকূলে সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি ব্যবহারে সুদমুক্ত অগ্রিম অর্থ বরাদ্দ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এখনো সেই চিঠির ইতিবাচক কোনো উত্তর পায়নি কমিশন।

গত ২৫ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- ‘প্রধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা অগ্রিম নগদায়ন ২০১৮ (সংশোধনী) এর নীতি ৬(৪) অনুযায়ী গাড়ি ক্রয় ও আনুষঙ্গিক খরচাদি যেমন রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ইত্যাদি খরচ নির্বাহের জন্য এককালীন সুদমুক্ত ঋণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো। এ সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে।’

এরপর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মে মাসে সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ৩৯ জন কর্মকর্তার বিশেষ অগ্রিম ও গাড়িসেবা নগদায়নের প্রাপ্যতা রয়েছে উল্লেখ করে অর্থ বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেন।

তবে এরই মধ্যে কিছু কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে এখন প্রায় অর্ধশত। সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম কোড অনুমোদন ও সচিবালয়ের সংশোধিত বাজেটের মধ্যে পাঁচ কোটি ১০ লাখ টাকা সংযোজন করার অনুরোধ জানান।

তবে আগামী অর্থবছর থেকে নির্বাচন কমিশনের প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তারা ঋণ সুবিধা পেতে শুরু করবেন। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে মৌখিক সম্মতি পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ইসি সাবেক সচিব অর্থ সচিবকে দেওয়া চিঠিতে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের নিয়োগ ও অন্যান্য সুবিধা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আইন, ২০০৯ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আইনের-৭ ধারা মোতাবেক নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়ে সরকারের সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে কর্মকর্তা ও সুবিধা প্রদানের বিষয়টি একান্তই তাদের নিজস্ব।’

‘কমিশন সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগেও স্বতন্ত্র আইনি বিধান রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম প্রদানের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বরং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বাজেটের আওতায় সম্পূর্ণ এখতিয়ারাধীন।’

কমিশনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে ‘৭২১৫১০৩- সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম’ কোড অনুমোদন ও সচিবালয়ের সংশোধিত বাজেটের মধ্যে পাঁচ কোটি ১০ লাখ টাকা পুন:উপযোজন প্রয়োজন।

জানা গেছে, সরকারের প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মতো নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারাও ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত গাড়ি ঋণ পাচ্ছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্মতি এসেছে। তবে, ইসির ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন কমিশনের জন্য যেহেতু আলাদা বাজেট হয়, সেই কারণে তাদের ঋণের বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের গাড়ি ঋণের জন্য কী পরিমাণ অর্থ দরকার হবে, তা তারা বাজেটে চাহিদা আকারে দেবে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী বরাদ্দ প্রদান করবে।

জনপ্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের আরও অনেক দফতর রয়েছে যেখানে উপসচিব বা তার থেকে উচ্চ পদমর্যাদার নিজস্ব কর্মকর্তা রয়েছে। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন থেকে নির্বাচন কমিশন বা সংসদ সচিবালয়কে গাড়ি ঋণ দেওয়া হলে অন্যদের থেকেও দাবি উঠবে। যেটা সরকারকে কিছুটা হলেও চাপে ফেলতে পারে।

এ বিষয়ে নির্বাচন ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা মতামত দিলেই বিষয়টি সমাধানে আসবে। নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে যারা উপযুক্ত পদে থাকবেন, তারাই এ সুবিধা পাবেন।’

ইসির উপ-সচিব (সাধারণ সেবা) মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি এখনো সমাধানে আসেনি। এটি এখনও প্রক্রিয়াধীন আছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পদভিত্তিক কিছু বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আশা করি দ্রুত সেটির সমাধান হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর