হিজড়াদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ ট্রেনের যাত্রীরা

ঢাকা, জাতীয়

আপেল মাহমুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 20:37:24

হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের উপদ্রব সব জায়গায়তেই কমবেশি দেখা যায়। বিশেষ করে গণ পরিবহনে তাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ যাত্রীরা। চাহিদা মতো চাঁদা না দিলে অসামাজিক আচরণ করেন তারা। তবে সম্প্রতি ট্রেনে হিজড়াদের উপদ্রব বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নিয়মিত যাতায়তকারী ট্রেন যাত্রীরা। বিশেষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণের সময় হিজড়াদের খপ্পরে পড়লে বেকায়দায় পড়তে হয়।

কমলাপুর রেল স্টেশনে মো. সিরাজুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ট্রেনের ভ্রমণ শান্তির ভ্রমণ। কারণ বাসে জ্যাম থাকে বা দুর্ঘটনার ভয় থাকে। কিন্তু ট্রেনে এসব ঝামেলা থাকে না। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে নিয়মিত ট্রেনেই যাত্রা করি। কিন্তু যাত্রাপথে হিজড়াদের উপদ্রব সম্প্রতি একটু বেড়েছে। তারা হঠাৎ হাজির হয়ে চাঁদা দাবি করেন। চাহিদা মতো চাঁদা না দিলে অসামাজিক আচরণ করেন। ফলে পরিবারের সামনে লজ্জায় পরতে হয়। তাই এক প্রকার জিম্মি হয়েই তাদের চাঁদা দিতে হয়।’

হিজড়াদের চাঁদাবাজি বন্ধে ট্রেন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হিজড়াদের ব্যবহার সবারই জানা। হয়তো প্রশাসন এসব বন্ধে নির্দেশনা দেয় কিন্তু তারা সেটাও শোনেন না। তবে প্রশাসন আদৌ উদ্যোগ নেয় কিনা- সেটার বিষয়ে আমি অবগত নই।’

তবে ট্রেনের সাধারণ শ্রেণীতে হিজড়াদের উপদ্রব থাকলেও এসি বগিতে নিরাপত্তা জোরদার থাকায় তারা সেখানে প্রবেশ করতে পারেন না। সাধারণ শ্রেণীতে হিজড়াদের উপদ্রবের বিষয়ে ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট শরিফুল আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সাধারণ শ্রেণীতে মানুষের ভিড় থাকে বেশি। হিজড়ারা এই ভিড়ের মধ্যেই ঠেলাঠেলি করে উঠে যায়। তাদের বাধা দেওয়া হলেও শুনতে চান না।’

জিআরপি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হিজড়াদের ট্রেনে উঠতে বাধা দেওয়া হলেও তারা জোর করে উঠে পড়েন। কারণ ভিড়ের মধ্যে তাদের বেশি জোর করা যায় না।

অনেক সময় যাত্রীদের কাছে টাকা না থাকলে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ সহ বাজে ভাবে চিল্লাচিল্লি করে সকল মানুষের সামনে। অনেক সময় পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হয়ে যায়। মানুষের পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা বের করে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।

অনেকটা জিম্মি করেই অনেকের কাছে থেকে টাকা নেওয়া হয়। প্রশাসন বা কারোও তোয়াক্কা না করেই এরা পার পেয়ে যান। অনেকেই নিজেদের সন্মানের খাতিরে মুখ খুলে না। চুপচাপ সহ্য করে যায় তাদের নির্যাতন।

সুকুমার বড়ুয়া নামের এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশের সামনেই হিজড়ারা চাঁদা তোলেন। তারা দেখেও কিছুই বলে না। হিজড়াদের উপদ্রব কমাতে আরও কঠোর হতে হবে।’

অন্যদিকে, অভিযোগ স্বীকার করে জিআরপি পুলিশের এএসআই জাহাঙ্গীর আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘পুরো ট্রেনের দায়িত্বে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় জন থাকে। আমাদের দেখলে হিজড়ারা দৌঁড়ে অন্য বগিতে চলে যান।’

ট্রেনে দায়িত্বরত টিসি আহমেদ বাবুল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা আগেও এমন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। কর্তৃপক্ষই এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’

সরেজমিনে একতা এক্সপ্রেসে দেখা যায় হিজড়াদের উপদ্রব চরম আকার ধারণ করেছে। তাদের টাকা না দিলে অনেক যাত্রীর সাথে মারামারি পর্যন্ত হয়। এ সময় জিআরপি ঢাকা বিভাগের এসপি মনিরুজ্জামানকে বিষয়ে অবগত করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর