জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক শিক্ষাসফরে যাবেন বলে গত বছরের নভেম্বরে যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে দেন। জাহিদুলের ভাগ্য এতটাই মন্দ, যে পাসপোর্ট ২১ দিনে পাওয়ার কথা তা ৭ মাসেও মেলেনি। উপরোন্তু তাকে শুনতে হচ্ছে পাসপোর্টটি পেতে লেগে যেতে পারে দুই বছর।
সাধারণ পাসপোর্ট করতে সময় লাগার কথা ২১ দিন, বড় জোর এক কিংবা দুই মাস। কিন্তু কেরানীগঞ্জের যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবাগ্রহীতাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে মাসের পর মাস। জাহিদুলের মতোই এমন অভিযোগ করেছেন পাসপোর্ট অফিসে আসা অন্যান্যরাও।
আঞ্চলিক এই পাসপোর্ট অফিসে এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। পাসপোর্ট পেতে দুই বছরও লাগতে পারে-এমন কথা বলেছেন অফিসের কর্মকর্তারা, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত বছরের ২৮ নভেম্বর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আঙুলের ছাপ দিয়ে ছবি তুলে এসেছিলাম। পাসপোর্ট দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২১ দিন পরে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর। কিন্তু ৭ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও হাতে পাইনি পাসপোর্ট। এদিকে দুই মাস পর আমার ভারতে শিক্ষাসফর রয়েছে।
অভিযোগ করে জাহিদুল বলেন, গত সাত মাসে ৫/৬ বার পাসপোর্ট অফিসে এসে অবশেষে জানতে পারি আমার তুলনামূলক ভেরিফিকেশন দরকার। সেখানকার এক কর্মকর্তার সহকারী রফিক নামে একজন আমাকে বলেন, এই পাসপোর্ট পেতে ২ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। পাসপোর্ট অফিসের ইন্সপেকশন কর্মকর্তা হূমায়ুন কবির রিফাত আমাকে বলেন, আমার সঙ্গে নাকি অন্য আরেকজনের নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম হুবহু মিলে যাওয়ায় তুলনামূলক পুলিশ ভেরিফিকেশন দরকার। তাই পাসপোর্ট পেতে ২ বছর লাগার কথা।
এই ভুক্তভোগী আরও বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, সেখানে আমার বাবার নাম, মায়ের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ একবার ভেরিফিকেশন করে পজেটিভ রিপোর্ট দিয়েছে কিন্তু এখানে এসে অন্য সমস্যা। এদিকে আমার ন্যাশনাল আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন, কর্মস্থল সব আছে এবং আলাদাও। তাহলে ডিজিটাল যুগে এ সামান্য কারণে পাসপোর্ট পেতে এত সময় লাগবে কেন?
এমন আরেক ঘটনায় চার মাস ধরে ভুগছেন ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তার দেওয়া বয়স আর নাম মিলে গেছে আরেকজনের সঙ্গে। তাকেও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কর্মকর্তাদের কড়া পাহারায় এই ব্যক্তির সঙ্গে বেশি কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাকে টেনে নিয়ে পঞ্চমতলায় যাওয়ার সময় তিনি বলতে থাকেন, আমার কি এমন সমস্যা যে আমাকে এভাবে ঘোরাচ্ছেন। পুলিশ রিপোর্টেও তো সমস্যা নেই।
১২ বছর বয়সী মাইনুল ইসলাম শান্ত'র মা এসেছেন ছেলের পাসপোর্ট করাতে। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি খুলনা। আমি ঢাকায় থাকি। ছেলে অসুস্থ। ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাব দেশের বাইরে। সব কাগজ নিয়ে এসেছি, কাগজ জমা নিচ্ছে না। আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধন হয়েছে ২০১৪ সালে। এখন সে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করতে পারবে না বলে বারবার অফিস থেকে বের করে দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। তাদের কথা হচ্ছে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন লাগবে। এটা এখন আমি কোথায় পাব? ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনে ১৭ ডিজিটের নম্বর থাকবে, শান্ত'র জন্ম নিবন্ধনেও ১৭ ডিজিটই আছে। এমন জন্ম নিবন্ধন দিয়ে আমার চেনা জানা অনেকে পাসপোর্ট করিয়েছেন। তাহলে আমার কি সমস্যা বুঝতে পারছি না। তারা কি চায় পরিষ্কার করে বলেনও না। এভাবে শুধু শুধু চার পাঁচবার এসেছি আর ঘুরে গেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তার সহকারী রফিক বার্তা২৪কমকে বলেন, আমরা কী করতে পারি? আমরা আমাদের মত কাজ করে যাই। সময় লাগলে আমাদের কী করার আছে?
সাংবাদিক পরিচয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে অফিসের ইন্সপেকশন কর্মকর্তা হূমায়ুন কবির রিফাত বার্তা২৪.কমকে বলেন, এসব আমাকে বলে লাভ নেই। এসব ডিজিটাল কাজ সেই ডিজিটাল ওয়ালারাই ভালো জানে। এসব ডিজিটাল ভোগান্তি। তবে পাসপোর্টের ব্যাপারে চিঠি ইস্যু করতে হবে বিষয়টি আমি দেখব।
এ সময় এক আবেদনকারী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবার রিফাত এভাবেই বলেন ভুক্তভোগীদের। তিন মাস আগেও তিনি বলেছিলেন আমরা তুলনামূলক ভেরিফাই করবার জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। তবে আজও তিনি দেখবেন বলেই পাঠিয়ে দিলেন।
সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপসহকারী পরিচালক হেলাল উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা চেষ্টা করি সময়মত চিঠিগুলো পাঠানোর। কিন্তু এসবি (পুলিশ) অফিস থেকে রিপোর্ট আসতে অনেক সময় লাগিয়ে দেয়। পুলিশি রিপোর্ট সময়মত না আসলে আমাদের করার কিছুই থাকে না।