মোবাইল অ্যাপে মিলছে আম, দাম বেশিতে আপত্তি

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 02:27:35

রাজশাহীর আমের মোবাইল অ্যাপভিত্তিক বিক্রয় সেবা বেশ সাড়া ফেলেছে। ইংরেজিতে ‘Rajshahi mango’ আর বাংলায় ‘রাজশাহীর আম’ নামে চালু হওয়ায় এই অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসে দেশের যেকোনো প্রান্তে রাজশাহীতে উৎপাদিত আম পাবে ভোক্তারা। প্রবাসে থাকা মানুষও দেশে আত্মীয়-স্বজনের কাছে গিফট হিসেবে আম পাঠাতে পারবেন। একই সঙ্গে থাকবে রাসায়নিকমুক্ত আম পাওয়ার নিশ্চয়তা।

তবে মান ও সার্ভিস ভালো হলেও অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় অনেক ক্রেতা আপত্তি জানাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, আমের দাম কেজি প্রতি প্রায় দ্বিগুণ টাকা রাখা হচ্ছে। পৃথকভাবে নেওয়া পরিবহন খরচের বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিলেও ক্রেতারা প্যাকেজিং খরচের চড়া মূল্য নিয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন।

অ্যাপভিত্তিক আম বিক্রয় সেবার উদ্যোক্তা হাসান তানভীর ২০১৩ সালে তার নিজের বাগানের আম ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেবাকে আরও সহজ করার জন্য তিনি এবার মোবাইল অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ চালু করেছেন। গত ৩০ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসক অ্যাপের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তবে ওই সময় শুধু গোপালভোগ আম সরবরাহ করা হয়।

অ্যাপের তথ্য অনুযায়ী- আগামী ১২ জুন থেকে ল্যাংড়া, তোতাপুরী, সূর্যপুরী এবং ১৩ জুন থেকে হিমসাগর বা খিরসাপাত আম সরবরাহ করা হবে। এছাড়া আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনা, হাড়িভাঙ্গা জাতের আম জুলাইয়ের প্রথম দিকে পাওয়া যাবে।

রোববার (৯ জুন) রাতে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা হাসান তানভীর বার্তা২৪.কমকে জানান, অ্যাপটি যেকোনো স্মার্টফোনে ব্যবহার করা যাবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যে ‘রাজশাহীর আম’ নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। নিজের তথ্য দিয়ে সেখানে নিবন্ধন করতে হবে। এরপরই আগ্রহী ক্রেতা পৌঁছে যাবেন রাজশাহীর আমের ভুবনে।

তিনি আরও জানান, সেখানে আমের ছবি, বর্তমান দাম এবং যারা আগে এই অ্যাপ থেকে আম কিনেছেন তাদের মতামত দেখা যাবে। আমের পরিমাণ নির্ধারণ করে পেমেন্ট অপশনে যেতে হবে। মূল্য পরিশোধ করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং, সরাসরি ব্যাংক পেমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো ক্রেতার আরও কিছু জানার থাকলে এই অ্যাপের কল অপশন ব্যবহার করে বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি কথাও বলে নিতে পারবেন।

ফেসবুক পেজ থেকে অ্যাপে আসার কারণ জানতে চাইলে হাসান তানভীর বলেন, ‘তার ফেসবুক পেজে এখন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার অনুসারী। ক্রেতাদের সেখানে এত চাপ যে তাদের পক্ষে ক্রেতাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফোনকলের মাধ্যমে বুকিং নিতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। আবার অনেক ক্রেতা মোবাইল ফোনে কথা বলে সময় নষ্ট করতেও চান না। তারা অ্যাপে ঢুকে দেখেশুনে অর্ডার নিশ্চিত করতে পছন্দ করেন।’

এদিকে, সোমবার (১০ জুন) অ্যাপে গিয়ে দেখা যায়, ১০টি প্রজাতির আমের তথ্য দেওয়া আছে। যার মধ্যে এখন অর্ডার করা যাচ্ছে চারটি জাতের আম। এর মধ্যে হিমসাগর বার খিরসাপাত কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, ল্যাংড়া ৭০ টাকা, তোতাপুরী ৭৫ টাকা এবং সূর্যপুরী ৭০ টাকা কেজি দামে সরবরাহ করা হচ্ছে। রাজশাহীর বাজারে এখন হিমসাগর বা খিরসাপাত ৪৫ থেকে ৫০টা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ল্যাংড়া বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে।

অ্যপেরকমেন্ট অপশনে মোহাম্মদ শিবলি নামে একজন লিখেছেন, ‘মাত্র ১০ কেজি আমের প্যাকেজিং খরচ রাখছেন ১৫০ টাকা। এটা কী খুব বেশি হয়ে গেলো না!’

আব্দুল কাইয়ুম রাজু নামে একজন লিখেছেন, ‘আমি চট্টগ্রামে থাকি। ১০ কেজি আম আনার জন্য যদি ৩১০ টাকা খরচ পড়ে। ওই টাকা দিয়ে এখানে আরও চার কেজি ভালো মানের আম কিনতে পাওয়া যাবে।’

মোকসেদ আলী নামে একজন লিখেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। তবে আমি যতোটুকু জেনেছি- রাজশাহী আমের উৎপাদন কেন্দ্র এবং ওইখানে আমের দাম কম। একজন ক্রেতা যদি প্যাকেজিং খরচ এবং সরবরাহ খরচ বহন করে, তাহলে আমের দাম কেজিপ্রতি আরও কম হওয়া উচিত।’

হুময়ান কবীর নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘আমি ১০ কেজি হিমাসগর আমের জন্য বিকাশ অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা পাঠালাম। কিন্তু এখনো কনফারমেশন এসএমএস পেলাম না!’

অ্যাপ যাচাই করে দেখার পর প্যাকেজিং ও পরিবহন খরচ বেশি রাখার অভিযোগ বিষয়ে জানতে হাসান তানভীরের মোবাইলে কয়েক দফা কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর