সিএনজি অটোরিকশায় আগ্রহ নেই যাত্রীদের

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্ত২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 10:21:18

একটা সময় ছিল যখন রাজধানীতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা খুব দাপটের সঙ্গে চলাচল করত। কিন্তু বাড়তি ভাড়াসহ বিভিন্ন কারণে অটোরিকশার চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যাত্রীরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অটোরিকশা থেকে। হাঁকডাক দিয়েও যাত্রী পাচ্ছেন না অটোরিকশা চালকরা।

তাছাড়া পাঠাও, উবারসহ মোবাইল অ্যাপস ভিত্তিক বিভিন্ন যানবাহন পাওয়া যায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই। এক্ষেত্রে গাড়ি খুঁজতে যেতে হয় না। ঘরে বসেই মেলে গাড়ি। নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে বেশি বা কম নেওয়ার বা দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে যাত্রী আর চালকদের মধ্যে ভাড়া বা গন্তব্য নিয়ে কোনো বাগবিতণ্ডা হয় না। ভাড়া কিছুটা বেশি হলেও ঝক্কি এড়াতে অ্যাপস ভিত্তিক যানবাহনের প্রতিই আগ্রহী যাত্রীরা। অনেক ক্ষেত্রে অটোরিকশা আর উবারসহ অন্যান্য অ্যাপস ভিত্তিক গাড়ির ভাড়া একই হয়। আবার অটোরিকশা চালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি অনেকেই অপছন্দ করেন। সব মিলিয়ে যাত্রীর অভাবে লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা।

উত্তরবঙ্গ থেকে সড়ক পথে আসা বেশিরভাগ যাত্রীকে রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে গন্তব্যে যেতে অনেকেই অটোরিকশা ভাড়া করেন। সরেজমিন দেখা যায়, অন্যান্য সময় টেকনিক্যাল মোড় থেকে অটোরিকশায় মোহাম্মদপুর যেতে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া নিয়েও যাত্রী টানতে পারছেন না অটোরিকশার চালকরা।

যাত্রী না পাওয়ার কারণ হিসেবে অটোরিকশার চালক মিন্টু হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, বেশিরভাগ যাত্রী পাঠাও বা উবারে চলাচল করছে। অটোরিকশায় আগের মতো যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। অটোরিকশায় গেলে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করতে হয়। ফলে বেশিরভাগ যাত্রী অটোরিকশায় যেতে চায় না। তাছাড়া মহাসড়ক যেমন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, টঙ্গী, বিক্রমপুর এসব এলাকায় আমাদের যেতে দেওয়া হয় না। ঢাকা সিটিতে এখন পাঁচ হাজারেরও বেশি অটোরিকশা চলাচল করে। এক জায়গায় এত অটোরিকশা থাকায় অনেকেই ট্রিপ পাচ্ছেন না।

সাদিয়া সুলতানা মৌ নামে এক যাত্রী বার্তা২৪.কমকে বলেন, অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে বাড়তি ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি করতে হয়। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে যদি জ্যাম থাকে তাহলে চালক বলে, আপু সামনে অনেক জ্যাম, আগেই নেমে যান। এই যদি হয় তাদের সার্ভিস, টাকা দিয়ে আমি কেন যাব? যেখানে ভালো সার্ভিস পাব সেখানেই তো যাব।

বাড়তি ভাড়া নেওয়া প্রসঙ্গে আরেক চালক মো. আতিকুর রহমান চুন্নু বলেন, আমরাও চাই যাত্রীদের কাছ থেকে কম ভাড়া নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে। কিন্তু বাড়তি ভাড়া না নিলে আমাদের খরচ ওঠে না। প্রতিদিন অটোরিকশার মালিককে জমা দিতে হয় ১০০০ টাকা, গ্যাস নিতে হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার, নিজের খাওয়া দাওয়ার জন্য ২০০ টাকা খরচ করতে হয়। আর রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়ালেই তো ট্রাফিক সার্জেন্টের মামলা আছে, সেটাও ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার নিচে না। একজন অটোরিকশা চালককে প্রতিদিন ১৬০০ থেকে ১৯০০ টাকা খরচ দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। প্রতিদিন যদি রাস্তায় এত টাকা ব্যয় হয় তাহলে আমাদের তো বাড়তি ভাড়া নিতে হবে। তা না হলে আমাদের পেট চলবে না।

রিপন হাসান নামে এক যাত্রী বার্তা২৪.কমকে বলেন, একটি বিমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। এজন্য মিরপুর থেকে নিয়মিত উত্তরায় অফিস করতে হয় আমাকে। বাইক বা কার রাইড শেয়ারিং সার্ভিস থাকায় কম টাকায় আমি দ্রুত ঝামেলা ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছি। কিন্তু অটোরিকশায় যেতে চাইলে ৪০০ টাকা ভাড়া চেয়ে বসে, মিটারে যায় না। এ রকম নানা জটিলতায় আমি আর এখন অটোরিকশায় যাই না।

কল্যাণপুর মোড়ে থাকা অটোরিকশা চালকরা বার্তা২৪.কমকে বলেন, অটোরিকশাকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসতে এবং যাত্রী বান্ধব করতে হলে অটোরিকশা মালিকদের সরকার নির্ধারিত ৭০০ টাকা জমা দিতে হবে। হাইওয়েগুলো আমাদের জন্য খুলে দিতে হবে। এছাড়া রাস্তায় গাড়ি থামালে ট্রাফিক পুলিশের অযথা হয়রানি ও জরিমানা বন্ধ করতে হবে। আর ঢাকায় অটোরিকশা রাখতে হলে পাঠাও, উবার উঠিয়ে দিতে হবে।

ঢাকার সিএনজি চালিত অটোরিকশা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, যখন প্রথম ঢাকায় অটোরিকশা চলাচল করে তখন আমরা ২৫০ টাকা করে জমা রাখতাম। কিন্তু এখন সব ধরনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় চালকদের কাছ থেকে বেশি টাকা রাখতে হচ্ছে।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, সিএনজি অটোরিকশা গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবহন হিসেবে উপরে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু এই ছোট্ট সেক্টরের শৃঙ্খলা ফেরাতে পারিনি। এটা আমাদের রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। আপনি দেখবেন, অটোরিকশায় যে মিটার ব্যবস্থা সেটা কিন্তু এখন জাদুঘরে চলে গেছে, এখন মিটার নাম শুনলে অনেকেই আঁতকে ওঠেন। অনেক চালককে মিটারের কথা বললে তারা বলেন মিটার নষ্ট। চালকরা যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এখন তো উবার ও পাঠাওয়ের মতো সেবা আছে। তাই সবকিছু মিলিয়ে সিএনজি অটোরিকশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর