বিনোদন কেন্দ্রের অভাবে খুলনাবাসীর ঈদ আনন্দে ভাটা

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 03:42:32

ঈদ মানেই আনন্দ-আয়োজনে সময় কাটানো। খুশির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিটি মানুষই সাধ্য অনুযায়ী ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন, বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঢুকে আনন্দ উৎসবে শামিল হন। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় খুলনাবাসীর ঈদ আনন্দে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খুলনাবাসী ও দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষেরা। নগরীতে হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র থাকলেও তাতে নেই বিনোদন পাওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা।

ঈদের ৩য় দিন শুক্রবার (৭ জুন) সরেজমিনে খুলনা মহানগর ঘুরে দেখা যায়, খুলনার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের নর-নারী ও যুগলদের উপস্থিতিতে বিনোদন কেন্দ্রগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে। ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টির কারণে অনেকেই ভ্রমণে বের হতে পারেননি। যে কারণে ঈদ আনন্দ উদযাপনে ঈদের তৃতীয় দিনেরটিকে বেছে নিতে কেউ ভুল করেননি।

ঈদে বিনোদন কেন্দ্রের ভেতরে সবচেয়ে বেশি মুখর ছিলো, রূপসা নদীর ওপর খানজাহান আলী (র.) সেতু, রূপসা সিটি বাইপাস, ৭নং ঘাট রুজভেল্ট জেটি, খালিশপুরের ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্ক, মুজগুন্নি ঈদ মেলা, গিলাতলা ক্যান্টনমেন্ট চিড়িয়াখানা, জাতিসংঘ শিশুপার্ক, হাদিস পার্ক, শেখ রাসেল ইকো পার্ক, ভূতের আড্ডা ও ফরেস্ট ঘাটে।

তবে এসব পার্কের ভেতরে শুধুমাত্র নগরের খালিশপুরের ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কে শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য নানা উপকরণ (রাইড) রয়েছে। অন্য কোনো বিনোদন কেন্দ্রেই নেই শিশুদের উপযোগী উপকরণ। নগরের মুজগুন্নির শিশুপার্কে শিশুদের জন্য নানা উপকরণ (রাইড) থাকলেও কিছুদিন আগে পার্কটি সরকারিভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

পরিবারের সঙ্গে খানজাহান আলী (র.) সেতুতে ঘুরতে আসা মেহজাবিন মুবিনা বার্তা২৪. কমকে বলেন, রূপসা ব্রিজ কোনো বিনোদন কেন্দ্র না। খুলনায় তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। ঈদের ছুটিতে একটু নির্মল বাতাস আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে মানুষ মূলত ব্রিজের এখানে আসে। ব্যাপারটা এমন যে, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছি। বিনোদন কেন্দ্র নেই বলে আমরা রূপসা ব্রিজকে বিনোদন কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছি।

পরিবার পরিজন নিয়ে শেখ রাসেল ইকো পার্কে ঘুরতে আসা জাবি ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, খুলনা নগরীর আশপাশে ভালো কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। নগরীতে যে কয়টা পার্ক আছে তাতে শিশুদের জন্য কিছু নেই। শেখ রাসেল পার্ক নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম আমরা। কিন্তু প্রায় ২ বছরেও পার্কের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। শিগগিরই পূর্ণাঙ্গভাবে পার্কটি চালু করার দাবি জানান তিনি।

৭নং ঘাট রুজভেল্ট জেটিতে ঘুরতে আসা সাজ্জাদ আহমেদ বলেন, খুলনা বেশ ছোট শহর। তার উপরে কোনো বিনোদনের জায়গা নেই। গতকাল সিনেমা হলে গিয়েছিলাম। তাতে যা পরিবেশ, সেখানে বসার উপায় নেই। বিনোদন কেন্দ্র বলতে নদীর পাড়কেই বেছে নিচ্ছে সবাই।

ঢাকা থেকে খুলনায় পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে আসা চাকরিজীবী মামুন রহমান বলেন, ঈদ করতে খুলনায় এসেছি। বৃষ্টির কারণে প্রথম দু’দিন বের হতে পারিনি। আজ জাতিসংঘ পার্কের মেলায় গিয়ে দেখলাম সেখানে কয়েকটা দোলনা, স্লিপার আর কয়েকটা চটপটির দোকান। এই হচ্ছে বিনোদনের ব্যবস্থা। এর থেকে ঢাকার ফুটপাতে অনেক বেশি বিনোদনের ব্যবস্থা আছে!

নামমাত্র বিনোদন কেন্দ্রের কারণে বিনোদনপ্রেমীরা বিনোদনকেন্দ্র বিমুখ হচ্ছে খুলনায়। ঈদকে কেন্দ্র করে কাছে-দূরের যেকোন দর্শনীয় স্থানে প্রিয় মানুষদের নিয়ে ভ্রমণযাত্রা করা ও সেখানে স্বপ্নের মতো কিছু সময় কাটানো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খুলনাবাসী।

নাগরিক আন্দোলনের সংগঠন জনউদ্যোগ খুলনার আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদা বার্তা২৪.কমকে বলেন, শুধু উৎসবই না সারাবছরই নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের প্রয়োজন। ১৬ লাখ মানুষের আবাসস্থলে চাহিদা অনুসারে খুলনায় পর্যাপ্ত বিনোদন কেন্দ্র নেই। বিশেষত উৎসবের সময়টায় বিনোদন থেকে বেশি বঞ্চিত হন খুলনাবাসী। তবুও আমরা আশাবাদী, কারণ বর্তমান সরকার এদিকে খেয়াল রাখছেন।

খুলনা জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন বলেন, খুলনায় প্রায় দেড়শ’ বিঘা জায়গার উপর শেখ রাসেল ইকোপার্কটি স্থাপন করা হচ্ছে। কাজটি শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য এটি হবে একটি মডেল পার্ক। খুলনার মানুষের বিনোদনের জন্য আমাদের আরো অনেক পরিকল্পনা আছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর