ঈদযাত্রায় সড়কে স্বস্তি, ট্রেনে দুর্ভোগ

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:23:45

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের বাকি আর দুই থেকে তিনদিন। তাই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ইতোমধ্যে নৌপথ, সড়কপথ এবং রেলপথে যাত্রা শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। নৌপথ ও সড়কপথে ঈদযাত্রায় স্বস্তির খবর পাওয়া গেলেও ট্রেনে মিলছে না স্বস্তি। একের পর এক ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ও দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঈদযাত্রা করছেন ট্রেনের যাত্রীরা। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসেও মিলছে না সমাধান।

সড়কপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লাইনের কাজের পুরোপুরি শেষ না হলেও চারটি আন্ডারপাস ও দুটি সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সড়কে ঈদ যাত্রায় বেসরকারি পরিবহনের পাশাপাশি ঘরমুখো যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিআরটিসির এক হাজার ৮৯টি গাড়ি ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। ফলে সড়কপথে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো যাত্রীরা।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়ে লাগতো এখন পাঁচ ঘণ্টারও কম সময়ে যাওয়া যাচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত হয়েছে। যদি সড়কের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে তাহলে ঈদের আগে এবং ঈদের পরে সড়কে বড় কোনো যানজট হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক পথে এবার মানুষের যাত্রা স্বস্তির হচ্ছে। কোথাও কোনো দুর্ভোগের খবর পাইনি। তাছাড়া ঈদকে সামনে রেখে যারা অচল ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামায়, এবার তারা সে সাহস পায়নি। কারণ, পুলিশ প্রশাসন রাস্তায় অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি তৎপর রয়েছে।’

হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অনেকগুলো কাজের উদ্বোধন হয়েছে। এজন্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত সেই ধরনের কোনো জ্যাম চোখে পড়েনি। এতে যাত্রীরা যেমন স্বস্তি পেয়েছে, তেমনি বাসের সবগুলো ট্রিপ যথাসময়ে ছাড়তে পেরে আমরাও খুশি।’

এদিকে, ট্রেনের যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে রেল কর্তৃপক্ষ এবারের ঈদ যাত্রায় আটজোড়া স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস ও ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ নতুন বগি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করা হয়েছে। তার কিছুদিন আগে বিরতিহীন রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ঈদযাত্রায় পর্যাপ্ত ট্রেন থাকলেও সময় অনুযায়ী ছেড়ে না যাওয়ায় সিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

গত শুক্রবার (৩১ মে) কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘প্রথম দিন যে সকল ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে। দ্বিতীয় দিন আর এই সিডিউল বিপর্যয় থাকবে না।

তবে দ্বিতীয় দিনেও বেশ কিছু ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে একই অবস্থায় খবর পাওয়া গেছে। ফলে প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মো. আমিনুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন অনেকগুলো ট্রেন সময়মতো যাচ্ছে। এর মধ্যে দু-চারটি ট্রেন লেট করে গেলে সেটাকে সিডিউল বিপর্যয় বলা যাবে না। আর এখন ঈদের সময় দুই থেকে তিনগুণ যাত্রী বেশি চলাচল করে। তাই যাত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেনের গতি কিছুটা কম থাকে। তাছাড়াও বিভিন্ন স্টেশনে যেখানে ২ মিনিট থামার কথা, যাত্রী বেশি থাকায় সেখানে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এসব কারণে হয়তোবা ট্রেন আসতে এবং যেতে বিলম্ব হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে আজ (রোববর) থেকে তিনটা স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে। সব মিলে ৩৬টি আন্তঃনগর ট্রেন আজ থেকে চলাচল করছে বিভিন্ন রুটে।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঈদের আগে রাস্তা খুলে দেওয়ার ফলে সড়ক পথে স্বল্প সময়ে গন্তব্যে যাওয়া যাচ্ছে। এতে সড়কে বাসের গতি বাড়বে। যদি গতিকে নিরাপদ করতে না পারে তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার একটা ঝুঁকি থেকে যাবে।’

রেলপথের বিষয়ে তিনি বলেন , ‘রেলপথে বেশিরভাগ ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় থাকায় রেলপথের যাত্রীসাধারণ পরিবার-পরিজন নিয়ে স্টেশনে এসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অনতিবিলম্বে ঈদযাত্রায় এসব বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর