ফিরতি টিকিট বিক্রির শুরুতেই অকেজো রেলসেবা অ্যাপস!

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-30 08:52:41

রাজশাহীতে বুধবার (২৯ মে) ঈদের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আগাম টিকিটের মতো ফিরতি টিকিট এবারই প্রথম অনলাইনেও বিক্রি করা হচ্ছে। কাউন্টারে ৫০ শতাংশ এবং রেলসেবা অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও।

তবে যাত্রীদের অভিযোগ- টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার ৫ মিনিট পরই অকেজো হয়ে গেছে রেলসেবা অ্যাপস। ফলে অনলাইনে যারা টিকিট কেনার জন্য চেষ্টা করেছেন, তাদেরকে এক পর্যায়ে স্টেশন এসে কাউন্টারে দাঁড়াতে হয়েছে। তবে ততক্ষণে কাউন্টারেও অনেক ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ফলে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রের দাবি- অ্যাপসে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে এবং অনেকে টিকিট পাচ্ছে। যদিও কিছুটা ত্রুটির কথা স্বীকার করছেন কর্তৃপক্ষ। তবে যাত্রীরা বলছেন- টিকিট কেনা তো দূরে থাক, একদমই অ্যাপসে ঢোকা যাচ্ছে না।

অ্যাপসে টিকিট কিনতে না পেরে বুধবার (২৯ মে) দুপুরে স্টেশনে হাজির হওয়া মামুনুর রশিদ নামে এক যাত্রী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি সেহরির পর বেশ কয়েকবার অ্যাপসে ঢুকলাম, তখন সব ঠিক। সকাল ৯টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তখনো ঠিকঠাকই চলছি। হঠাৎ ৯টা ৫ মিনিটের পর থেকে আর কোনোভাবে অ্যাপসে ঢুকতে পারছি না। আমার কিছু পরিচিত লোকজনের সঙ্গে কথা বললাম, তারাও একই কথা জানিয়েছেন।’

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সার্ভার সমস্যা তো আছেই, পাশাপাশি আমার কাছে মনে হয়েছে- কিছু কারসাজিও আছে। সার্ভার ডাউন থাকছে, কেউ টিকিট পাচ্ছে না অনলাইনে। অথচ দেখা যাচ্ছে- বেশ কিছু টিকিট বিক্রিও হয়ে যাচ্ছে।’

রেলওয়ের কোনো অসাধু কর্মকর্তারা এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে ডিজিটাল উপায়ে কালোবাজারি করছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, রেলসেবা অ্যাপসে টিকিট না পেয়ে আসা যাত্রীদের চাপে দুপুরের পর থেকে রাজশাহী স্টেশনে ভিড় বাড়তে থাকে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের টিকিট কিনতে দেখা যায়। তবে কাউন্টারে টিকিটি পেতেও যাত্রীদের নানা অসন্তোষ দেখা যায়।

যেমন- বিশেষ ট্রেন কবে বন্ধ থাকবে, কবে চালু থাকবে, তার কোনো নোটিশ স্টেশনে না থাকায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারে পৌঁছে কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিট চেয়ে ওই দিন ট্রেন বন্ধ বলে জানতে পারছেন যাত্রীরা। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে টিকিট দিতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছেন অনেক কর্মকর্তা।

যাত্রীরা বলছেন- কর্মকর্তা অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকিট দেওয়ার বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠেনি। ফলে তারা উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করায় কাউন্টারে হই-হুল্লোড় বাড়ছে।

ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরুর পর দুপুরে স্টেশন পরিদর্শনে আসেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম। সে সময় হুমায়রা বেগম নামে একজন নারী সরাসরি মহাব্যবস্থাপকের কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করেন।

হুমায়রা বেগম মহাব্যবস্থাপককে অভিযোগ করে বলেন, ‘কোন দিন কোন ট্রেন বন্ধ থাকবে তার নোটিশ এখানে টানানো নেই। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আমি যখন কাউন্টারে পৌঁছে টিকিট চেয়েছি, বলা হলো- ওই দিন ট্রেন বন্ধ থাকবে। হঠাৎ আমি কী করব সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তখন কর্মকর্তা ও পেছনের অন্য যাত্রীরা আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। আমি যে- ওই দিনের পরদিনের টিকিট নিব কিংবা অন্য কোনো সময়ের, তার জন্য এখন আবার আমাকে লম্বা লাইনের পেছনে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সকালে টিকিট বিক্রি শুরুর পর অ্যাপসে একসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টিকিট প্রত্যাশী প্রবেশ করেছেন। ফলে সার্ভারে সমস্যা হয়েছে।’

তবে আগামীতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরও বাড়ানো হলে এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে বলে দাবি করেন তিনি।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৫ জুন ঈদের দিন ধরে বুধবার থেকে রাজশাহী স্টেশনে আগাম ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ দেওয়া হয়েছে আগামী ৭ জুনের টিকিট। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দেওয়া হবে ৮ জুনের টিকিট, শুক্রবার (৩১ মে) ৯ জুনের, শনিবার (১ জুন) ১০ জুনের এবং রোববার (২ জুন) টিকিট মিলবে ১১ জুনের।

ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরুর আগের রাত থেকে স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। কেউ কেউ রাতে স্টেশনে ঘুমিয়ে পার করেছেন। কেউ কেউ সেহরি সেরেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আর অ্যাপসে টিকিট না মেলায় দুপুরের পর স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় আরও বেড়ে যায়।

জানা গেছে, ফিরতি টিকিট প্রত্যাশীদের বেশি চাহিদা রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনে। এছাড়া খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট্রের চাহিদাও রয়েছে। রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে প্রতিদিন শোভন ও এসি চেয়ার মিলিয়ে টিকিট সংখ্যা ৪ হাজার ৬৬৩টি। আর খুলনাগামী ট্রেনে টিকিটসংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর