মুরগির সেডে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-31 18:59:06

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। সাথে নিম্মমানের পাম্প অয়েল, ক্যামিকেল আর রং। তৈরি হচ্ছে ঈদের খাদ্য তালিকার অন্যতম অনুসঙ্গ লাচ্ছা সেমাই। ঈদকে ঘিরে এদিকে যেমন বেড়েছে লাচ্ছা সেমাই তৈরির হিড়িক, অন্যদিকে বাড়তি লাভের আশায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী কারখানা গড়ে তুলে তৈরি করছেন লাচ্ছা সেমাই।

এর ধারাবহিকতায় রংপুরের হাট বাজার থেকে শুরু করে বসত বাড়িতে গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন সেমাই তৈরির অসংখ্য কারখানা। বাহারি রঙের মোড়কে নামে-বেনামে প্যাকেটিং হচ্ছে এসব কারখানার তৈরি লাচ্ছা সেমাই। কোথাও কোথাও হোটেল রেস্তোরাঁ ও বেকারির মালিকরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি লাচ্ছা সেমাই খোলা বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে রাখছে। আর ক’দিন পরই নিম্নমানের এই ভেজাল সেলাই ছড়িয়ে যাবে নগর বন্দর গ্রামের সবখানেই এই।

সরেজমিনে রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার জুড়িন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে চোখে পড়েছে মুরগির সেডে লাচ্ছা সেমাই তৈরির দৃশ্য। সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাঠখড়ি পুড়িয়ে নোংরা তেলে ভাজা হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে এই অস্থায়ী কারখানা চালানো হচ্ছে। সেখানকার আকবর মিয়ার বাড়ির মুরগির সেডে মৌসুমি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন এভাবে লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছেন।

স্থানীয় যুবক লাবু, হারুন ও সোহেল বার্তা২৪.কমকে জানান, মুরগি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন সাময়িকভাবে তার পুরোনো ব্যবসা বন্ধ রেখে এখন লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছেন। অথচ কিছুদিন আগেও সেখানে মুরগি রাখা হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর হোসেন কথা বলতে রাজি হননি। তবে তার কারখানার এক কর্মচারী বার্তা২৪.কমকে জানান, মুরগির সেডে এখন কোন নোংরা নেই। ভালো করে পরিষ্কার করার পরই লাচ্ছা সেমাই তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। রমজান মাস শেষ হলে আবারও মুরগি রাখা হবে।

মাহিগঞ্জের মতো রংপুর মহানগরের বিভিন্ন এলাকাতে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনুমোদন ছাড়াই তৈরি করা হচ্ছে মণকে মণ লাচ্ছা সেমাই। এসব কারখানার তৈরি খাদ্যের ব্যাপারে নিয়মিত ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে প্রশাসন।

গত ২২ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুরে র‌্যাব-১৩ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। একই সঙ্গে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা মূল্যমানের ক্ষতিকর খাদ্য সামগ্রী ধ্বংস করেছে।

র‌্যাব-১৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) ও এএসপি খন্দকার গোলাম মোর্তুজা বার্তা২৪.কমকে জানান, স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের ব্যবহার ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে র‌্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া বাজারে এসব নিম্নমানের ভেজাল খাদ্যের ব্যবহার প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের রংপুর উপ-পরিচালক খন্দকার মোহাম্মদ নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ভেজাল এই লাচ্ছা সেমাই স্বাস্থ্যের জন্য মরাত্মক ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে ভোক্তাদের সচেতন হবার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর