শহরে প্রবেশেই মণপ্রতি আমে হাজার টাকা ব্যবধান!

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-30 23:13:47

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে। মহানগরী থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ভালো জাতের আম পাড়া শুরু হওয়ায় বৃহৎ আমের বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। চোখে পড়ছে ব্যবসায়ী-আড়তদারদের ব্যাপক আনাগোনাও।

ভালো জাতের আম বলতে বানেশ্বরসহ রাজশাহীর বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে শুধুই গোপালভোগ। বানেশ্বর বাজারে গোপালভোগ আম মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। তবে এই একই আম রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, স্টেশন ও রেলগেট এলাকায় ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে! যা বানেশ্বর বাজারের চেয়ে মণপ্রতি প্রায় ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা বেশি। অর্থাৎ মাত্র ২০ কিলোমিটারের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি।

ফলে এ নিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন ক্রেতারা। নগরীতে বসবাস করা অনেকেই মৌসুমী ফল আম কিনতে এসেও ফিরে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, আড়তদার-মজুতদারদের জন্য রাজশাহীতে বাস করেও ঢাকার দরে আম কিনে খেতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) দুপুরে সরেজমিন বানেশ্বর বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভ্যানের চারদিকে বাঁশ দিয়ে উঁচু খাঁচা তৈরি করে তাতে আমভর্তি করে চাষিরা আম নিয়ে এসেছেন। সেখানে আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমচাষিদের দর কষাকষি চলছে। শুধু রাজশাহীর আড়তদার নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকার আড়তদারদের দেখা মিললো বানেশ্বর বাজারে। এখানে মূলত পাইকারি দরে আম বিক্রি করা হচ্ছে।

পুঠিয়ার আমচাষি সিদ্দিকুর রহমান ও তার ছেলে আমিরুল দুই ভ্যানে করে আম নিয়ে এসেছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি দেশি জাতের গুঁটি আম কাঁচা বিক্রি করে দিয়েছি। এখন গুঁটি গোপালভোগ আম নামিয়েছি। সেগুলো বাজারে নিয়ে এসেছি। ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে অরজিনাল গোপালভোগ এখনো বাজারে সেভাবে আসেনি। যারা এনেছে, তারা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ বিক্রি করছে।

তবে আরেক আম চাষি সিরাজুল ইসলাম তার গোপালভোগ আমকে আসল দাবি করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মাঝে বৃষ্টি হওয়ায় গোপালভোগ বেশ বড় হয়েছে। কেজিতে ৪টা থেকে ৫টা আসছে। পরিপক্কও ভালে হয়েছে। পাড়ার একদিনেই পেকে যাচ্ছে। আমি এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ টাকা দরে তিন মণ বিক্রি করেছি। এখন যা আছে, সেগুলো একটু ছোট। দাম কিছুটা কম হবে। ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় ছেড়ে দেব।

এদিকে, একই দিনে দুপুরে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার ও লক্ষ্মীপুর মোড়ে ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে সর্বনিম্ন ৮০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ মণপ্রতি দাম হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকা। বানেশ্বর বাজারের থেকে যা প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বেশি।

সাহেববাজার থেকে আম কিনতে আসা রাফসানি বার্তা২৪.কমকে জানান, পেশায় তিনি একজন চাকরিজীবী। সারাদিন অফিস করে দূরে গিয়ে আম কিনে এনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই দ্বিগুণ দাম হলেও অফিস থেকে ফেরার পথে দুই/তিন কেজি করে কিনে নিয়ে যান তিনি।

তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের অধিক মুনাফা লাভের আশায় ক্রেতাদের পকেট কাটার বিষয়টির দিকে প্রশাসনের সুদৃষ্টি দেওয়ার দাবি জানান ক্রেতা রাফসানি।

আসলাম হোসেন, নাজনীন বেগম, তোহুরা খাতুন, সবুজসহ আর অনেক ক্রেতা তার মতোই ক্ষোভ জানিয়ে প্রশাসনের নজরদারি করার আহ্বান জানান।

দামে এত ফারাকের বিষয়ে জানতে চাইলে সাহেব বাজারের আম ব্যবসায়ী সাদেকুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাটে (বানেশ্বর) পাইকারি দরে আম বিক্রি হয়। আমি কিনে আনতে পথে পথে আড়তদার, হাট ইজারাদারসহ নানা হোমড়া-চোমড়াদের টাকা দিতে হয়। যদি খুচরা বাজারে এসে তার দ্বিগুণ দামে আম না বিক্রি করি, তবে বউ-বাচ্চার আর পেটে ভাত যাবে না। পথে বসতে হবে।’

রেলগেট এলাকার আম বিক্রেতা আকতার হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বানেশ্বরে আমরা আম পাইকারি দরে কিনি, এখানে খুচরা দরে সারাদিন বসে বিক্রি করি। তাও তো হিসেবে কম দামে আমরা বিক্রি করছি। এতে আহামরি কোনো লাভ হচ্ছে না।‘

জানা যায়, গত ১২ মে চলতি মৌসুমের আমপাড়ার সময়সীমা বেধে দেয় জেলা প্রশাসন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- গত ১৫ মে থেকে দেশি জাতের গুঁটি আম পাড়া শুরু হয়। ২০ মে থেকে গোপালভোগ আম গাছ থেকে পাড়া শুরু করেছে চাষিরা।

আগামী ২৮ মে হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাত, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৬ জুন আম্রপালি, ফজলি ও সুরমা ফজলি এবং ১ জুলাই আশ্বিনা আম পাড়া যাবে। তবে রমজানে দাম ভালো না পাওয়ার শঙ্কায় অনেক চাষি এখনো আম পাড়া শুরু করেনি। ঈদের পর থেকে পুরোদামে তারা আম নামাতে শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। দুই লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বাঘা উপজেলাতে আট হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আমচাষ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর