সিভিল সার্জনকে খুশি করলেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স!

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 13:58:10

রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার পরিচিতি ক্লিনিকপাড়া হিসেবে। সিপাইপাড়া থেকে ঝাউতলা পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৫০টি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। যার বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে নিয়ম-নীতি ও আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে।

মালিক সমিতির অভিযোগ, আইন-কানুনেরই বালাই নেই। সিভিল সার্জনকে ‘খুশি’ করলেই ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক পরিচালনার লাইসেন্সের গ্যারান্টি শতভাগ। এ জন্যই পাড়া-মহল্লা থেকে হাট-বাজারেও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক গড়ে উঠছে।

তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এগুলো মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সভাপতি ডা. এএসএম মান্নান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘১৯৮২ সালের আইন দিয়ে চলছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলো। কিন্তু এ আইনটি বাস্তবতার সঙ্গে মিল না রেখেই করা হয়েছিল। যার কারণে মানা সম্ভব হয় না। আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচজন রোগীর জন্য একজন করে নার্স থাকতে হবে। প্রতি দশজন রোগীর বিপরীতে থাকবেন একজন চিকিৎসক। কিন্তু এই শর্ত আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মানা হয় না। সম্ভবও নয়।’

১৯৭৮ সাল থেকে ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িত ডা. মান্নান বলছেন, পাড়া-মহল্লা থেকে হাট-বাজারে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার দায় সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন অফিসেরই। কারণ তারা লাইসেন্স দেয়। আর লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে তারা পরিদর্শনে আসেন। এসময় কেউ শর্ত বা আইন মানলো কি না তা মূখ্য বিষয় থাকে না। সিভিল সার্জনকে ‘খুশি’ করতে পারলেই লাইসেন্সের গ্যারান্টি শতভাগ।

অভিযোগ নিয়ে বুধবার (২২ মে) ও বৃহস্পতিবার (২৩ মে) কয়েক দফা কার্যালয়ে গেলেও রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমানের দেখা মেলেনি। তার কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. বার্নাবাস হাসদাক জানান, সিভিল সার্জন মিটিংয়ের জন্য বাইরে আছেন।

রাজশাহী নগরীতে বৈধ ও অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিভিল সার্জন ছাড়া এসব তথ্য দেওয়া যাবে না।’

এদিকে, এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক নিয়মিত তদারিক জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা। গত মঙ্গলবার (২১ মে) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধরা পড়ছে নানা অনিয়মও।

অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রনী খাতুন জানান, লাইসেন্স না থাকায় এইড প্লাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সাদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের ৫৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।

অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে তিনি।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে থাকা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আলম ইফতেখার বেলায়েত বলেছেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকগুলো মনিটরিংয়ে গঠন করা হয়েছে কমিটি। এই কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখবে কারা আইন মানছে বা মানছে না। এরপরই পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর