বন্দুকযুদ্ধ দিয়ে শুরু হওয়া মাদক নির্মূল অভিযানের এক বছর পূর্ণ হয়েছে তিনদিন আগে। এ অভিযানে র্যাব- পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি বন্দুকযুদ্ধে ৩৬০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। উদ্ধার হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি পিস ইয়াবা। আত্মসমর্পণ করেছেন ১০২ জন প্রথম সারির মাদক ব্যবসায়ী।
এত কিছুর পরে, রাজধানীসহ সারা দেশে ইয়াবার ছোট ছোট চালানগুলোর হাত বদল বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। মাদক বেচাকেনার পয়েন্টগুলোতে আর মিলছে না মাদক।
তবে উদ্বিগ্নের বিষয়, ছোট চালানগুলো বা ব্যবসায়ীদের বন্ধ করা গেলেও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে ইয়াবার বড় চালান। উদ্ধার হচ্ছে লাখ লাখ পিস ইয়াবা।
রোববার (১৯ মে) একদিনেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে প্রায় তিন লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। তাছাড়া গত এপ্রিল মাসেই কক্সবাজারে ১২ লাখ পিস ইয়াবাসহ সারাদেশে ২৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব-পুলিশ-বিজিবি-কোস্টগার্ড ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
চলতি এ বছরেই একাধিক বার ৮ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়। এর ২-১ দিন পর পর লাখ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছে। যেখানে ১০-১৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক মাদক স্পট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে আর মাদক বিক্রি চলছে না। নিয়মিত যে মাদক বিরোধী অভিযান করছে পুলিশ, সেখানেও বেশি সংখ্যক মাদক কারবারি গ্রেফতার হচ্ছে না।
তবে এর মধ্যে স্থল, জল ও আকাশ পথ দিয়ে আসছে মাদক। সাম্প্রতিক সময়ে তিন দিক দিয়ে আসছে ইয়াবার বড় চালান। বড় এই চালানগুলো ধরা পড়লেও, ধরা পড়ছে না জড়িত মাদক ব্যবসায়ীরা। ফলে লাখ লাখ ইয়াবা চালানের নেপথ্যে জড়িতরা এখনোও অধরা থেকে যাচ্ছে।
এদিকে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাব বলছে, অভিযান এর শুরুর পর থেকে গত এক বছরে একাধিক নিরাপত্তা সংস্থার অভিযানে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি পিস ইয়াবা ও ১০-১২ মণ হেরোইন উদ্ধার হয়েছে।
মাদকের ভয়াবহতা রোধে গত বছরের ১৫ মে থেকে অভিযান শুরু হয়ে, রোববার (১৯ মে) পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৩৬০ জন মাদক ব্যবসায়ী।
তাদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৭০ জন। র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ১০৭ জন। বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১২ জন। বাকি ৭১ জন মাদক ব্যবসায়ী নিজেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
এ পর্যন্ত ইয়াবার প্রবেশদ্বার খ্যাত টেকনাফ কক্সবাজার এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৯৭ জন।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত আর গডফাদারদের আত্মসমর্পণের পরেও কেন টেকনাফ-কক্সবাজার দিয়ে ইয়াবার বড় বড় চালান আসছে জানতে চাইলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তারা বড় মাপের ব্যবসায়ী। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও এমন কারবারি রয়েছেন। যাদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, ‘এখনও ইয়াবা কারবারিরা আছে। যারা ইয়াবার চোরাচালান টিকিয়ে রেখেছে। তবে এটা সত্য মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসা এখন অনেক কমে গেছে।’
একই বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মাদক এখন আর সহজলভ্য নয়। সব ব্যবসায়ী যে আইনের আওতায় এসেছে বিষয়টা এমন না। তবে এখন যারা মাদক বেচাকেনা করছে, তারা খুবই গোপনে কাজটি করছে।’
তিনি বলেন, এখনো কিছু বড় ব্যবসায়ীরা রয়েছে। যারা এই বড় চালানগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে মাদক নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর তৎপরতায় তারাও আইনের আওতায় আসবে। তখন মাদক নির্মূল হবে।