‘দেশে সাংবাদিকতার সহায়ক পরিবেশ নেই’

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-25 16:05:51

ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমের মালিক হওয়ায় ব্যবসার ঝুঁকির কথা চিন্তা গণমাধ্যমগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা। বাংলাদেশে বর্তমানে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সহায়ক পরিবেশ নেই বলেও মন্তব্য করেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের এই সদস্য। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রধান কার্যালয়ে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৭’ ঘোষণা ও প্রদান অনুষ্ঠানে ‘দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন সাবেক সিইসি। তিনি বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে সংবাদ প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেন না। দুঃখজনক এই পরিস্থিতি গণমাধ্যম, গণতন্ত্র বা রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। দুর্নীতি প্রতিরোধসহ সুশাসন ও সর্বস্তরে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুফল পেতে গণমাধ্যমকর্মীদের নির্ভয়ে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব আরোপ শামসুল হুদা বলেন, এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারের ভেতরে থাকা দুর্নীতিগ্রস্ত ও প্রশ্রয়দানকারীদের চিহ্নিত করতে সরকার গণমাধ্যমকে সহায়তা করলে তা সরকারের জন্যই ইতিবাচক হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী সরকারের মধ্য থেকে যারা দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম অগ্রাধিকার দারিদ্র্য দূর করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে দেশে দুর্নীতি থাকে সে দেশে কখনো দারিদ্র্য দূর হবে না। তাই সরকারে থেকেও যারা দুর্নীতিবাজদের সহায়ক, তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দুর্নীতির প্রতিবেদন করতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে হুমকিসহ বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়- সাংবাদিকদের এমন অভিযোগের উত্তরে গওহর রিজভী বলেন, গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ করার কোনো নির্দেশনা কাউকে দেয়নি সরকারে। কেউ যদি এটা করে থাকে, সেটা নিজস্বার্থে করছে এবং এর দায়ও তারই। আলোচনা শেষে টিআইবি’র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৭-এর বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার পাঁচজন সাংবাদিক ও চার জন ভিডিও চিত্রগ্রাহকসহ মোট নয় জন এ পুরস্কার পেয়েছেন। প্রিন্ট মিডিয়া (জাতীয়) বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদক অরূপ রায়। প্রিন্ট মিডিয়া (আঞ্চলিক) বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম আলাউদ্দিন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (প্রতিবেদন) বিভাগে মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু এবং ভিডিও চিত্র ধারণে বিশেষ ভূমিকার জন্য মাছরাঙা টেলিভিশনের সিনিয়র ভিডিও চিত্রগ্রাহক মেহেদী হাসান সোহাগকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (প্রামাণ্য অনুষ্ঠান) বিভাগে যৌথভাবে বিজয়ী হয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের স্টাফ করেসপনডেন্ট সবুজ মাহমুদ এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার মো. জাহিদ মামর ইসলাম। প্রামাণ্য অনুষ্ঠান বিভাগে ভিডিওচিত্র ধারণের বিশেষ ভূমিকার জন্য ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক রাকিবুল হাসান ও গোলাম কিবরিয়া এবং যমুনা টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক তানভীর মিজানকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিজয়ী প্রত্যেক সাংবাদিককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ এবং প্রত্যেক ভিডিও চিত্রগ্রাহককে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক সংলাপে বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার ওপর অনুষ্ঠিত সংলাপে বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলাভিশনের বার্তা সম্পাদক শারমীন রিনভী এবং দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইফতেখার মাহমুদ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর