চট্টগ্রামে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ

চট্টগ্রাম, জাতীয়

আবদুস সাত্তার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2023-09-01 22:52:29

নগরীতে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ। সম্প্রতি সময়ে চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এ কিশোর গ্যাং। হত্যাকাণ্ড ছাড়াও মাদকদ্রব্য সেবন এবং বিক্রিতে জড়িয়ে যাচ্ছে গ্যাংস্টারদের কেউ কেউ। কিশোর গ্যাংস্টারদের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা।

জানা গেছে, নগরীতে বেশ কিছু অপরাধের নেপথ্যে রয়েছে সম্প্রতি গজিয়ে ওঠা বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের প্রতিটিতে সদস্য থাকে ২০ থেকে ৩০ জন। প্রত্যেক সদস্যের পরিচিত গ্যাংস্টার হিসেবে। এসব গ্যাংস্টাররা প্রত্যেকেই ধনীর সন্তান ও নামি-দামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। শুধু স্কুল-কলেজ নয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও জড়িত এসব গ্যাংদের সঙ্গে। আবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কথিত রাজনৈতিক বড় ভাইদের। তবে এবার রাজনৈতিক বড় ভাইদের খোঁজছে পুলিশ।

শুক্রবার (১০ মে) নগরীর পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর ফিলখানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ছুরিকাঘাতে খুন হন মোস্তাক আহমেদ (৩৫)। ছেলের সঙ্গে বখাটে কিশোরদের ঝগড়া মিটাতে গেলে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় জড়িত ছিলো ১০/১৫ জনের একদল কিশোর। যাদের বয়স ১৮ বছরের কম।

মঙ্গলবার (১৪ মে) নগরী ডবলমুরিং থানার হাজিপাড়ায় রিক্সা চালক রাজু আহমেদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয় ১০/১২ জনের কিশোর গ্যাং। তাদের বড় ভাই ছগির হোসেন জেল থেকে নির্দেশ দেন মফিজ নামের একজনকে খুন করার জন্য। কিন্তু টার্গেট মিস করে কিশোররা রাজুকে খুন করে। এ কিশোররা মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। এদের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের সবার বয়স ১৮ বছরের মধ্যে।

অন্যদিকে ১৪ এপ্রিল ইয়াবা সেবনের টাকা না পেয়ে বাবা রঞ্জন বড়ুয়াকে ছুরিকাঘাতে খুন করে ছেলে রবিন বড়ুয়া। কোতোয়ালী থানার কাজির দেউড়ীর ব্যাটারী গলিতে এ ঘটনা ঘটে। বাবাকে হত্যাকারী রবিনও কিশোর বয়সের।

কিশোর গ্যাংদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র, ছবি: বার্তা২৪.কম

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গ্যাংস্টারদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া রাজনৈতিক বড় ভাইয়েরা ছাড় পাবে না। যেকোনো অপরাধ সংঘঠিত হলে গ্যাংস্টারদের পাশাপাশি রাজনৈতিক বড় ভাইদেরও গ্রেফতার করার জন্য ওসিদের নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি বলেন, আশংঙ্কজনকহারে বেড়ে গেছে কিশোর অপরাধ। এগুলো দমানোর জন্য রাত ৮টার পর বাইরে আড্ডায় পেলে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্যও পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গ্যাংস্টাররা নিজেদের মধ্যে গায়ে পড়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। সামান্য ঝগড়া থেকে শুরু হয় মারামারি। আর এসবে মজা খুঁজে পায় বখে যাওয়া কিশোররা। আগাম সংবাদের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পয়েন্টে রড, চাপাতি ও অস্ত্র নিয়ে জমায়েত হয় তারা। টার্গেট সামনে আসা মাত্র কৌশলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বখে যাওয়া এসব কিশোর-কিশোরীর বাবা-মা অনেকক্ষেত্রেই অসহায়। মানসম্মানের ভয়ে তারা বিষয়টি নিয়ে থানা-পুলিশ পর্যন্ত যেতে চান না।

কিশোর গ্যাংস্টারদের অভিভাবকরা সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী। অনেকে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। তারা নিজেদের সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। ফলে ১৪ বছর থেকে শুরু করে ১৮-২০ বছরের মধ্যেই তার হয়ে ওঠে বেপরোয়া। এসব সন্তানরা মা-বাবার স্নেহ-মমতার অভাবেও বিপথগামী হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর