খুলনার পাড়া-মহল্লায় রোহিঙ্গা ছেলেধরা গুজব

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 09:42:40

 

খুলনার শহর ও গ্রামাঞ্চলে ছেলেধরা রোহিঙ্গা আতংক বিরাজ করছে। অপরিচিত নারী-পুরুষ গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পরেছে এমন গুজব ধীরে ধীরে ভয়াবহতায় রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিনই নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা রোহিঙ্গা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধী, অন্য অঞ্চলের ভিক্ষুক, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরে গণপিটুনি দিচ্ছেন স্থানীয়রা। গণপিটুনিতে খুলনায় নিহত হওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে, আবার অনেকে সতর্কতামূলক পোস্ট দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১১ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ছেলেধরা রোহিঙ্গা সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত (৫৫) এক বৃদ্ধ নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ স্থানীয় ২ জনকে আটক করে। পুলিশ ২৫০ জনের নামে মামলা করে।

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বিপ্লব বার্তা২৪.কমকে বলেন, একজন পাগল বৃদ্ধ ডুমুরিয়া মাগুরখালীর রাস্তায় ঘোরার সময় তাকে ছেলেধরা রোহিঙ্গা সন্দেহ করে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা পাগল বৃদ্ধকে অনেক প্রশ্ন করলে বৃদ্ধ কোনো উত্তর দিতে পারেনি। পাগল উত্তর দেবে কি করে? তারপর এলাকাবাসী তাকে গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে বৃদ্ধ নিহত হয়। নিহত বৃদ্ধের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র গুজবের কারণে গণপিটুনিতে পাগল বৃদ্ধ মারা যায়। অনুসন্ধানে তাকে মানসিক পাগল হিসেবে পাওয়া যায়।

গত মঙ্গলবার (১৪ মে) খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় ফুলতলা থেকে আসা ভিক্ষুক মা ও মেয়েকে এলাকাবাসী রোহিঙ্গা ছেলেধরা সন্দেহে ধরে থানায় সোপর্দ করে। দিঘলিয়া থানা থেকে ফুলতলায় যোগাযোগ করে তাদের রোহিঙ্গা না হওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়।

একই দিনে নগরীর যোগীপোলের ভাঙা, বৌ-বাজার ও মীরেরডাঙা এলাকা থেকে ৩ জনকে রোহিঙ্গা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপার্দ করেন এলাকাবাসী।

খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শফিকুল ইসলাম বার্তা২৪. কম‘কে বলেন, স্থানীয়রা রোহিঙ্গা সন্দেহে ৩ জনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন। খোঁজ নিয়ে আমরা দেখেছি তারা কেউ রোহিঙ্গা না। অন্য অঞ্চল থেকে পাগল আর ভিক্ষুক এলেই লোকজন রোহিঙ্গা ভেবে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন। গুজবের কারণে সবাই রোহিঙ্গা আতঙ্কে ভুগছেন।

গত (১৫ মে) রূপসা থেকে একজন, খালিশপুর থেকে একজন, নগরীর সোনাডাঙ্গা কাঁচাবাজার থেকে একজন, নিউ মার্কেটের সামনে থেকে একজন ও সোনাডাঙ্গা থেকে ১ জনকে রোহিঙ্গা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপার্দ করেছে এলাকাবাসী।

সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমতাজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, রোহিঙ্গা ছেলেধরা সন্দেহে ৩ পাগলকে ধরে এনেছে লোকজন। অপরিচিত কাউকে দেখলেই তাদের রোহিঙ্গা ভাবছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গা গুজবের সাথে যুক্ত হয়েছে ছেলেধরা আতঙ্ক।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বার্তা২৪. কম’কে বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই খুলনাঞ্চলে রোহিঙ্গা ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে পরেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কিছু লোকজন গুজব ছড়াচ্ছে। এ গুজবের কারণে ডুমুরিয়ায় এক পাগল বৃদ্ধ গণপিটুনিতে নিহত  হয়েছে। এ ঘটনায় দু'যুবক হাজতে আছে।

তিনি  আরো বলেন, সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে এলাকাবাসী যেনো তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। গণপিটুনির দিয়ে যেনো কেউ আইন হাতে না তুলে নেয়। গুজব ছড়ালে বা আইন হাতে তুলে নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত একসপ্তাহ ধরে খুলনা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা রোহিঙ্গা গুজব ছড়িয়ে পরেছে। খুলনার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা, রূপসা, ফুলতলা, দাকোপ, বটিয়াঘাটাসহ নগরের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় গুজব রটায় সবাই আতঙ্কিত হচ্ছেন। তবে এতে আতঙ্কিত না হয়ে গুজব না ছড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর