বহিষ্কার আতঙ্কে ছাত্রলীগ নেতারা

, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 21:29:53

পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে স্পষ্ট বিভক্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পদপ্রাপ্ত ও পদ বঞ্চিত এই দুই গ্রুপের মধ্যকার পাল্টাপাল্টি স্লোগান, হাতাহাতি, সংঘর্ষ, ক্ষোভ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে ছাত্র রাজনীতির আতুরঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে।

তবে উত্তেজনা প্রশমনে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। তারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রাপ্ত বিতর্কিতদের যেমন অভিযোগ প্রমাণ হওয়া সাপেক্ষে বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছেন ঠিক তেমনি সংগঠনে শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদেরও বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন। এই অবস্থায় বহিষ্কার আতঙ্ক বিরাজ করছে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মাঝে।

সম্মেলনের দীর্ঘ ১ বছর পরে গত সোমবার (১৩ মে) ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। কমিটি প্রকাশ হবার পরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রলীগের বিশাল একটি অংশ। কয়েকজন পদপ্রাপ্ত নেতাও অবমূল্যায়নের অভিযোগ তুলে কমিটি থেকে তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করেন।

পদবঞ্চিতদের অভিযোগ- বিতর্কিত এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন হত্যা-চেষ্টা মামলার আসামি, মাদকসেবী, বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার পরিবারের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে যুক্ত, বিবাহিত, সংগঠনে নিষ্ক্রিয় এবং অছাত্ররাও। সে তুলনায় ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয় নি।

অন্যদিকে পদপ্রাপ্তরা জানান- ছাত্রলীগ একটি বিশাল সংগঠন। এই সংগঠনের মাত্র ৩০১ সদস্যের কমিটিতে সবাইকে স্থান দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই কিছু মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-হাতাশা থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু তার ফলে কেউ যদি দলীয় ফোরামে সেসব অভিযোগ আলোচনা না করে ছাত্রলীগের সুনাম নষ্টের জন্য শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে সেটাও শাস্তিযোগ্য।

এভাবেই নিজেদের বক্তব্য নিয়ে রাজপথ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবখানেই মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুই গ্রুপের অনুসারী সমর্থকার। ছাত্রলীগের সাবেকরাও তাতে অংশ নেন। এমন অবস্থায় মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের উপর হামলার ঘটনাকে ‘সামান্য ঘটনা’ বলে মন্তব্য করে বিতর্ক উসকে দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। হানিফের বক্তব্যের পর আরো ক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্রলীগের এক অংশ। মানববন্ধনের মাধ্যমে তারা হানিফের কাছে তার বক্তব্যের জন্য কৈফিয়ত চান। এদিকে পরিস্থিতি মূল্যায়নে বুধবার (১৫ মে) গণভবনে শোভন-রাব্বানীকে ডেকে নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবনে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সদস্য এস এম কামাল হোসেন, ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।

গণভবনের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, প্রকাশিত কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে সোহাগ-জাকির আপত্তি তুলে জানান, তাদের অনুসারীদের কমিটিতে পর্যাপ্ত স্থান দেওয়া হয় নি। এ সময় শেখ হাসিনা তাদের প্রশ্ন করেন, তাহলে কি তাদের কমিটিটাই (সোহাগ-জাকির) আবার পুর্নবহাল করে দিতে চান তারা? চুপষে যান দুজনেই। অন্যদিকে শোভন-রাব্বানী কমিটি গঠনে সোহাগ-জাকিরের অসহযোগিতার কথাও তুলে ধরেন।

এসময় শেখ হাসিনা তাদের কাছে কমিটিতে স্থান পাওয়া বিতর্কিতদের ব্যাপারে ব্যাখ্যা চান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ত্যাগী নেতাদের ছাত্রলীগের পদে দেখতে চেয়েছিলাম, আমদানিকৃতদের নয়।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দ্রুত সংশোধিত কমিটি প্রকাশের নির্দেশ দেন শোভন-রাব্বানীকে।

এরপর টনক নড়ে শোভন-রাব্বানীর। রাতে ধানমন্ডি ৩/এ তে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার নেতার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিতর্কিত নেতাদের একটি তালিকা তৈরি করে শোভন-রাব্বানী জানান, অভিযোগ প্রমাণ স্বাপেক্ষে তাদের বহিষ্কার করা হবে। আবার শৃঙ্খলাভঙ্গের সঙ্গে যুক্ত কাউকেও ছাড় দেওয়া হবে না।

তালিকা প্রকাশের পর অনেক বিতর্কিত ব্যক্তি তাদের পদ নিয়ে আতঙ্কে আছে। আবার কেউ কেউ বিতর্ক এড়াতে পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অছাত্রত্বের অভিযোগের শিকার সহ সভাপতি বরকত হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমি চলে গেলে যদি আমার প্রাণের সংগঠন শুদ্ধ হয় আর প্রাণের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হয় তাবে তাই হোক।’

অন্যদিকে বিক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত থাকা কয়েকজন নেতা-কর্মী বার্তা২৪.কমকে বলেন, কমিটিতে ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয় নি। আমরা তাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেছি। অথচ এখন বলা হচ্ছে দলীয় ফোরামের কথা। কমিটির পর তো দলীয় ফোরামের কোন মিটিং ডাকা হয় নি। তাহলে বহিষ্কারের কথা আসবে কেন?

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা অনেক যাচাই বাছাই করে কমিটি গঠন করেছিলাম, তারপরও যেহেতু কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তাই আমরা স্বপ্রণোদিত হয়েই তাদের একটি তালিকা তৈরি করে ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের পদ শূন্য ঘোষণা করে অন্যদের মূল্যায়ন করা হবে। আর যারা হামলা, ভাংচুর করে সংগঠনের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে তাদেরকেও চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হবে। কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর