আসন্ন ঈদ-উল ফিতর কেন্দ্র করে ফেরিঘাটে যানজট মোকাবিলায় পাটুরিয়া, শিমুলিয়া, চাঁদপুর, ভোলা ও লাহারহাটে অর্ধশত ফেরির সবকটি সচল রাখা হবে। প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরে ফেরি সংযোজন-বিয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নৌপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সভা করেছে নৌ মন্ত্রণালয়। সভায় পাটুরিয়া ঘাটে ২০টি, শিমুলিয়ায় ১৮টি, চাঁদপুরে পাঁচটি, ভোলায় তিনটি, লাহারহাটে চারটি ফেরি চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়াও যাত্রীদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ সার্ভিস হিসেবে ঢাকা-মোড়েলগঞ্জ, খুলনা ভায়া চাঁদপুর-বরিশাল রুটে তিনটি প্যাডেল স্টিমারসহ পাঁচটি নৌযান ট্রাফিকে নিয়োজিত থাকবে।
উপকূলীয় সার্ভিস হিসেবে চট্টগ্রাম-হাতিয়া-চট্টগ্রাম রুটে তিনটি উপকূলীয় জাহাজ ট্রাফিকে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও উপকূলীয় সি-ট্রাক সার্ভিস হিসেবে সাতটি সী-ট্রাক সার্ভিসে নিয়োজিত থাকবে।
বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগে ফেরি ঘাট ও ডকইয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে স্ব-স্ব কর্মস্থলে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত রাখার ব্যবস্থা করা হবে। প্রধান কার্যলয় থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মর্কতারাদের সমন্বয়ে একাধিক টিম সদরঘাট, আরিচা, শিমুলিয়াসহ অন্যান্য ঘাটে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য থাকবেন।
ঈদের সময় কোনো নৌ-যানের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে, চরে আটকে গেলে বা জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তার জন্য বরিশালে একটি শক্তিশালী ‘টাপ’ স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। আর বিআইডব্লিউটিসির প্রধান কার্যালয়ের কন্ট্রোলরুম দিবা-রাত্রি চালু রেখে নৌ-যানগুরোর সাথে সার্বক্ষণিকভাবে যোগাযোগ রাখবে।
ফেরিঘাটে যানবাহন নষ্ট হয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা রোধে সংস্থার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া, কাঁঠালবাড়ী, চাঁদপুর (হরিণা), শরীয়তপুর ও লাহারহাটে সংস্থার রেকার নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও ডকইয়ার্ডে মেরামতে থাকা ফেরি ও যাত্রীবাহী নৌ-যান ঈদের আগেই ট্রাফিকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান প্রণয় কান্তি বিশ্বাস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখী মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে অন্য সময়ের তুলনায় বাড়তি ফেরি চলাচল করবে। আমাদের মোট ফেরি আছে ৫০টি, সবগুলো ফেরিই আমরা ঈদের সময় চালু রাখব।’
নৌ মন্ত্রণালয়ের সভা সূত্রে জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া ও চরজানাজাত ঘাটে যানবাহনের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ করতে পর্যাপ্ত ট্রাফিক সার্জেন্টসহ পুলিশ নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন বলে সভায় জানান সংশ্লিষ্টরা। প্রত্যেক ঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও নৌ-টহল পুলিশের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করা হয়।
পাইলটের স্বল্পতায় ফেরি চলাচল যাতে ব্যাহত না হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাইলট ফেরি বিআইডব্লিউটিএ'র মাধ্যমে মোতায়েনের ব্যবস্থা করার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় ফেরি চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাইলট নিয়োগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় বিআইডব্লিউটিএ। এছাড়াও ফেরি রুটে প্রয়োজনীয় নাব্যতা বজায়সহ নৌপথে প্রয়োজনীয় মার্কা ও বয়াবতি স্থাপনের ব্যবস্থার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ-কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির সচিব বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘অতিরিক্ত সংখ্যক ফেরি চালু রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের সবগুলো ফেরিই ঈদের সময় চালু থাকবে। আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। ঈদে ফেরি চলাচলে কোন সমস্যা হবে না।’
এদিকে বিগত বছরের ন্যায় যাত্রীবাহী বাস ও প্রাইভেট কারের নির্বিঘ্ন পারাপার নিশ্চিত করতে ঈদের পাঁচ দিন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া-চরজানাজাত রুটে নিত্য প্রয়োজনীয় জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক ব্যতীত সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, গত ৯ মে আসন্ন ঈদ-উল ফিতরে সড়ক মহাসড়কে যাত্রী সাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুতি সভায় ঈদে কোনো অবস্থাতেই ফেরি বন্ধ না রাখার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিআইডব্লিউটিসিকে নির্দেশনা দেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।