ভালো আছে সেই চাঁদাবাজ দুই হাতি!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 17:55:19

সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি করার সময় দুই হাতিকে জব্দ করে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় পাঠায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাতি দু’টিকে দিয়ে এখন আর চাঁদাবাজি করানো হয় না। ফলে স্বস্তি ফিরেছে প্রাণী দু’টির জীবনে।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্য জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর মাহুতরা হাতি দু’টি বশ মানিয়ে ফেলেছিলেন। তারপর রাস্তায় রাস্তায় হাঁটিয়ে চাঁদাবাজি করাতেন তারা। অপ্রতুল খাবার আর অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিল হাতি দু’টি। ঠিক মত চিকিৎসা হচ্ছিল না। এখানে এসে চিকিৎসা ও খাবার পাচ্ছে। চিড়িয়াখানার অন্য আরও তিন হাতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে তারা। হাতি দু’টি এখন ভালো আছে।

সোমবার (১৩ মে) জাতীয় চিড়িয়াখানার হাতি চত্বর ঘুরে দেখা যায়, পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় ধুলোবালি দিয়ে খেলা করছে সেই দুই হাতি। ঘাড়ের কাছে যে দগদগে ঘা ছিল সেটা শুকিয়ে গেছে প্রায়।

জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার হাতি পরিচর্চাকারী ওয়াহেদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, যেদিন ওরা প্রথম আসে, ওরা খেতেই পারছিল না। এখন চার বেলা করে খাচ্ছে। রাত ১১টার দিকে ওদের খাবার দেওয়া হয়। সেই খাবার সারারাত ধরে খায়।

সেই দুই হাতির একটি, ছবি: বার্তা২৪.কম



হঠাৎ আসা এ নতুন দুই প্রাণী সম্পর্কে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রথমে আমরা হাতি দু‘টি নিতে চাইনি। কিন্তু আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আমরা নিতে বাধ্য হয়েছি। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত হাতি দু’টি এখানেই থাকবে।

ওদের খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত বাজেট থাকে। কোনো প্রাণী মারা গেলে বাজেট কমে। আবার প্রাণী জন্ম নিলে তার বাজেট বৃদ্ধি পায়। তাদের নতুন প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এখন তারা আমাদের প্রাণী।

এর আগে শুক্রবার (৪ মে) বিকেলে কারওয়ান বাজারে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে শুঁড় তুলে সালাম দিচ্ছিল দুই হাতি। পিঠে বসা মাহুত। শুঁড় এগিয়ে দিচ্ছে সোজা দোকানদারের কাছে। যতক্ষণ পর্যন্ত শুঁড়ের মাথায় টাকা গুঁজে না দিচ্ছে কেউ, ততক্ষণ পর্যন্ত তা সরাচ্ছে না হাতি। এভাবে দোকান ভেদে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হচ্ছিল হাতির মাধ্যমে। চাঁদা না দিলে হাতি ভয়ও দেখাচ্ছিল।

এমন সময় কারওয়ান বাজারে ভেজাল বিরোধী অভিযান শেষে হোটেল সুপারের সামনে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখতে পান র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তিনি এগিয়ে গিয়ে হাতির দুই মাহুত শাহীন ও হেলালকে রাস্তা ছেড়ে পাশে অবস্থানের আদেশ দেন। কিন্তু হাতির মাহুতরা তা অমান্য করে গাড়ির জটলার ভেতর রাস্তা অতিক্রম করতে শুরু করেন।

এ ঘটনায় ওই দুই মাহুতকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, হাতি দু’টিকে জব্দ দেখিয়ে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়।

সে সময় র‍্যাবের ওই অভিযানের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছিল র‍্যাব-২।  র‌্যাব-২ এর এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, হাতি দু’টি উদ্ধার করে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছে।

হাতি দু’টি নিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার মনে হয় হাতি দু’টি ওখানে ভালো আছে। বন্যপ্রাণী বনে সুন্দর, না হয় চিড়িয়াখানায়। তাদের দিয়ে চাঁদাবাজি করার তো কোনো মানে হয় না।

সেই দুই হাতির একটি, ছবি: বার্তা২৪.কম


তিনি আরও বলেন, ওইদিন হাতি দু’টি প্রথম চলে আসে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে। তারপর প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল থেকে চাঁদাবাজি করে। গাড়ি থামিয়ে ভেতরে শুঁড় ঢুকিয়ে দিয়ে চাঁদা দাবি করছিল হাতিগুলো। বিদেশি পর্যটকবাহী একটি গাড়ি থামিয়ে যখন চাঁদা চাইছিল, তখন পর্যটকরা ভয়ে পুলিশ পুলিশ বলে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন। যেটা আমাদের জন্য অসম্মানের ছিল। চিড়িয়াখানায় পাঠানোর পরে আমরা খোঁজ নিয়েছিলাম। তখন শুনেছি, তারা ওখানে ভালো আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর