রাজধানীতে রেল ক্রসিংয়ে পথচারীদের ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 04:10:03

রাজধানীর বেশিরভাগ রেলক্রসিংয়ে দেখা গেছে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। ট্রেন আসার আগ মুহূর্তে যখন লাইনম্যান দুদিকে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা পারাপার বন্ধ করে দেন। ঠিক সে সময় পথচারী ও মোটরসাইকেল চালকদের রাস্তা পারাপারের প্রতিযোগিতা ঢাকার নিয়মিত ঘটনা।

বুধবার (৮ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি রেলক্রসিং যেমন, মগবাজার, এফডিসি মোড়, তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী রেলক্রসিং ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।

রেলওয়ের আইন অনুযায়ী, রেলপথের দু'পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় চলাচল আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওই সীমানার ভেতর কেউ প্রবেশ করলে তাকে গ্রেফতারের বিধান রয়েছে। তবে এই আইনের প্রয়োগ সেই অর্থে দেখা যায় না। আর রেলক্রসিংয়ে আশপাশে কোনো পুলিশ সদস্যদের দেখা মেলে না।

ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়া ব্যবসায়ী রহমানের সঙ্গে বার্তা২৪.কমের কথা হলে তিনি বলেন, ভাই জরুরি কাজ আছে, তাই এইভাবে পার হচ্ছি।’

এ সময় তিনি একটু রেগে গিয়ে বলেন, ‘ট্রেনতো একটু দূরেই আছে আপনার কি সমস্যা আমি পার হলে। জীবন আমার কিভাবে পার হবো সেটা আমার বিষয়।’

মুদির দোকানে কাজ করা রাসেল নামের এক সাইকেল আরোহী রেলক্রসিং পার হচ্ছিলেন। এ সময় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমি তেজগাঁওয়ে একটা মুদির দোকানে কাজ করি। বেশিরভাগ সময় সাইকেল চালিয়ে সবখানে যাই। সাইকেল নিয়ে পার হবার সময় ট্রেন আসলে কাটা পড়তে পারি, রিস্ক আছে জানি, তবুও পার হচ্ছি। তবে মৃত্যু আল্লাহর হাতে।’

এফডিসি মোড়ে রেলক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা লাইনম্যান নুরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'মানুষ আইন মানতে চায় না। সিগন্যাল দেওয়ার পরেও ট্রেন কাছাকাছি চলে আসলেও কিসের কি। সাইরেন বাজতে থাকে, দুই পাশে লোহার ব্যারিকেড দেয়া হয়, তারপরেও মানুষ সাইকেল, মোটর সাইকেল নিয়ে পার হতে থাকে। আমরা নিষেধ করলেও শুনতে চায় না। অনেক সময় সাধারণ মানুষের এই খামখেয়ালি চলাচলে ঘটে দুর্ঘটনা।’

মগবাজার রেলক্রসিংয়ের লাইন ম্যান কবির মোল্লা বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'ট্রেন আসার তিন মিনিট আগে আমরা ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে থাকি। রেলক্রসিং গুলোতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা বাড়ানো উচিত। স্টেশন মাস্টারদের সাথে লাইন ম্যানদের যোগাযোগ করার জন্য প্রতিটা রেলক্রসিংয়ে ওয়ারলেসের ব্যবস্থা করা হলে আমাদের কাজের সুবিধা হতো। আমাদের এই রেলক্রসিংয়ে একজন পুলিশ থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে আমার তা দেখি না।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যদি দেখি বড় রেল নেটওয়ার্কের দেশ। তারা রেললাইনকে আলাদা বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে গেছে। আমাদের রেল লাইন সম্পূর্ণ উন্মুক্ত থাকার কারণে অনেক পথচারীদের অবাধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলক্রসিং পার হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। এ ধরণের অভ্যাস পরিত্যাগ করা এবং যাত্রী-সাধারণের সচেতনতা অনেক জরুরি। রেলক্রসিংয়ের জায়গাটা যে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এ বিষয়ে সচেতন করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ রেল কর্তৃপক্ষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর দেখছি সড়ক পথে যে পরিমাণ প্রাণহানি হচ্ছে, তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য অংশ মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া।’

ঢাকা রেল স্টেশনের ম্যানেজার মোঃ আমিনুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জনগণের সচেতন হওয়া দরকার। এভাবে পার হলে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। তাই যখন ট্রেন আসার সময় ব্যারিকেড পড়ে যায় তখন আপনারা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হবেন না।’

কমলাপুর রেল পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ইয়াসিন ফারুক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি মনে করি জনগণকে সচেতন হতে হবে। মানুষকে বুঝতে হবে রেলক্রসিংয়ে ব্যারিকেড দেওয়ার পর পার হলে জীবনের জন্য ঝুঁকি থাকে। রেলওয়ে পুলিশ জনগণকে সচেতন করার জন্য স্টেশন গুলোতে সচেতনমূলক সভা করে, লিফলেট বিতরণ করে। বছরে ৩০০ বা তার কম বেশি মানুষ ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায় বলে জানান রেল-পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর