‘আর বাছিনে এতো টানা হেঁচড়ায়, আর বাছাতে চাইনে!’

খুলনা, জাতীয়

মনি আচার্য্য,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 05:44:16

মংলা থেকে: অমলা মণ্ডল ৮০ বছরের বৃদ্ধা। বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে গেছেন তিনি। এক পা দুই পা করে অনেক কষ্টে চলাফেরা করেন অমলা মণ্ডল।

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে ঘর থেকে ঘটিবাটি ও কাপড়সহ কিছু শুকনো খাবার নিয়ে কষ্ট করে পাকা রাস্তা ধরে সাইক্লোন শেল্টারের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। হেঁটে যেতে যেতে একাই বিড়বিড় করে বলছেন, হে ভগবান আর বাছিনে (বাঁচিনা) এত টানা হেঁচড়ায়, আর বাছাতে (বাঁচতে) চাইনে (চাইনা)।

বাড়ি থেকে ৩০ মিনিটের রাস্তা হাঁটার কষ্টে মুখে বাঁচতে না চাওয়ার কথা বলেও অমলা মণ্ডলের পা কিন্তু ধীরে ধীরে এগোচ্ছে সাইক্লোন শেল্টারের দিকেই। কয়েক কদম এগিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবারও হাঁটা শুরু করেছেন।

জীবন যুদ্ধের ক্রান্তিলগ্নে বয়সের ভারে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখে নানা কথা বলেও ঘূর্ণিঝড় ফণী'র কবল থেকে নিজেকে বাঁচাতে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন অমলা মণ্ডল।

শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যায় মংলা উপজেলার জয়মনি ঘোল গ্রামের বাসিন্দা এভাবেই কষ্ট করে বেঁচে থাকার তাগিদে পাশ্ববর্তী সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন।

অমলা মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার এক মেয়ে ও ছেলে রয়েছে। ছেলে আর ছেলের বৌয়ের সঙ্গে থাকেন অমলা মণ্ডল। কিন্তু তাদের সঙ্গে থাকলেই বা কি হবে দুর্যোগপূর্ণ এই আবহাওয়ায় তাকে একা একাই যেতে হচ্ছে সাইক্লোন শেল্টারে। কেউ তার পাশে এসে দাঁড়াননি।

এ বিষয়ে অমলা মণ্ডল বার্তা২৪.কমকে বলেন, তার সবাই থেকেও আজ তার কেউ নেই। সবাই নিজের মতো করে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। তার খেয়াল কেউ রাখে না। তাই একা একা এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সাইক্লোন শেল্টারে যেতে যেতে জীবনের প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে এসব কথা বলেছি। ছেলে আছে, ছেলের বৌ আছে কেউ আসেনি আমাকে এই রাস্তাটুকু এগিয়ে দিতে। আমি বুড়ো মানুষ এই অন্ধকার আবহাওয়া মধ্যে একা একা যাচ্ছি।’

এ সময় অমলা মণ্ডল সৃষ্টিকর্তার ওপর আক্ষেপ করে বলতে থাকেন, ভগবান সিডর ও আয়লার মতো দানবকে দেখালে। এখনো কি আমাকে আর কিছু দেখানোর বাকি রয়েছে তোমার। এতো কষ্টের জীবন কিভাবে রক্ষা করব। ঘূর্ণিঝড় ফণী সরে যাবে না আঘাত করবে তা কিছুই বলতে পারছিনে। কিন্তু গত ৩ দিন ধরে ভাত খেতে পারি না ভয়ে।

পূর্বের অভিজ্ঞতা ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার বিষয়ে অমলা মণ্ডল জানান, পূর্বে এমন সাইক্লোন শেল্টার ছিল না। তখন সিডর ও আইলার সময় ছেলে মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তখন স্কুলের দালানে যেতাম নয়তো প্রতিবেশীর পাকা দালানে যেতেন ঘূর্ণিঝড় হলে। উপকূলীয় অঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় ভাগ্যের নির্মম পরিহাসকে অনেকটা মেনেই নিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, এখন বাড়ির কাছে সাইক্লোন শেল্টার হওয়ায় কিছুটা হলেও ভাল হয়েছে।

ফণী সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন "ঘূর্ণিঝড় ফণী"

এ সম্পর্কিত আরও খবর